যশোরে গৃহবধু রহিমা হত্যাকান্ডের ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে স্বামী আটক 

যশোর প্রতিনিধি
গৃহবধু রহিমা খাতুন হত্যাকান্ডের ঘটনার সাথে সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে নিহতের স্বামী জাকির বিশ্বাসকে আটক করেছে।যশোর কোতয়ালী থানার পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে, ছদ্দবেশ ধারন করে, ফিরিওয়ালা সেজে, গতকাল রাতে চলন্ত ট্রেনে কোটচাঁদপুর রেল ষ্টেশন এলাকায় থেকে তাকে আটক করে।
যশোর কোতয়ালী খানার এসআই তাপস মন্ডল জানান, গত২০২১ সালের ১৩ ডিসেম্বর যশোর পুরাতন কসবা এলাকায় নিজ বাসয় খুন হয় রহিমা বেগম (৪২)। এঘটনায় নিহতের প্রথম পক্ষের ছেলে হাসানুজ্জান বাদি হয়ে থানায় মামালা করেন। আসামি করা হয় রহিমার দ্বিতীয় স্বামী জাকির বিশ্বাসকে।জাকির হত্যাকান্ডটি ঘটিয়ে কৌশলে বেনাপোলের সাদিপুর সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যায়।কয়েকমাস পর জাকির দেশে ফিরে বিভিন্ন মাজারে মাজারে অবস্থান নেয়।এক পর্যায়ে জাকির বিশ্বাস ট্রেনে ফেরি করে বাদাম বিক্রি শুরু করে। তাকে আটক করতে যশোর কোতয়ালী থানার এসআই তাপস ও ফেরিওয়ালা সেজে তার পিছু নেয় এবং যশোর-রাজশাহী গামি ট্রেনে জাকিরকে পেয়ে ও যায়,এবং কোটচাঁদপুর রেল ষ্টেশন থেকে তাকে আটক করে। সেখান থেকে আটক করে যশোরে নিয়ে আসে।
এব্যাপারে যশোর কোতয়ালী থানার ওসি মো. তাজুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে,তিনি জানান,রহিমা খাতুন হত্যাকান্ডে জাকিরকে আটক করা হয়েছে।তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।কোতয়ালী থানার ইন্সপেক্টর তদন্ত, মনিরুজ্জামান বলেন,অভিযুক্তকে আদালতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে এবং সে বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক বন্দীতে গৃহবধূ রহিমা খাতুনকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। পরোককীয়া প্রেমে আশক্ত হয়ে পড়েছিল রহিমা।তাকে নিষেধ করলে সংসারে অশান্তি সৃষ্টি করায় গলায় ওড়না পেচিয়ে শ্বাসরোধ রহিমাকে হত্যা করেছিল বলে জানিয়েছে জাকির হোসেন। সোমবার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মঞ্জুরুল ইসলাম আসামির এ জবানবন্দি গ্রহণ শেষে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। জাকির হোসেন শহরের কাজীপাড়ার জনৈক গোলাম সরোয়ারের বাড়ির ভাড়াটিয়া এবং বেনাপোল পোর্ট থানার মৃত ইমান আলীর ছেলে।
জাকির হোসেন জানিয়েছে, সে পেশায় ফেরিওয়াল সবজি ও মাছ বিক্রেতা। রহিমাকে সে ভালোবেসে দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন। এরপর জাকির ও তার স্ত্রী যশোর শহরে কাজীপাড়ার জনৈক গোলাম সরোয়ারের বাড়ির ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করতেন। রহিমা প্রায় রাত করে বাসায় ফিরতেন। মোবাইলে কল আসলে বাইরে যেয়ে কথা বলত। এতে জাকিরের সন্দেহ হয়। একদিন রহিমাকে শহরের গরীবশাহ মাজারের পাশে তার চাচাত ভাইয়ের সাথে গলা জড়িয়ে বসে থাকতে দেখেছেন। এতে জাকিরে সন্দেহ আরও বেড়ে যায়। এসব নিয়ে সংসারে আরও অশান্তি বেড়ে যায়। ২০২১ সালের ১২ ডিসেম্বর দিবাগত গভীর রাতে রহিমার মোবাইলে ফোন আসে। রহিমা তখন ফোন নিয়ে বাইরে যেয়ে কথা শেষ করে ঘরে আসে। জাকির বাইরে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে রহিমা ক্ষিপ্ত হয়ে মেঝেতে যেয়ে শুয়ে থাকে। এরমধ্যে রহিমার গলার ওড়না ধরে টান দিলে ফাঁস লেগে যায়। এরপর জাকির বেশকিছু সময় ওড়না টেনে ধরে রাখলে রহিমা মারা যায়। এরপর রহিমার লাশ কম্বল পেচিয়ে খটের রেখে মোবাইল ফোন নিয়ে ঘরের বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে জাকির পালিয়ে যায় বলে জানিয়েছে।
মামলার অভিযোগে জানা গেছে, ২০২১ সালের ১৬ মার্চ জাকিরের তালাবদ্ধ ঘর থেকে পচা গন্ধ পায় প্রতিবেশীরা। এরপর পুলিশ সংবাদ দিলে তালা ভেঙ্গে ঘরে যেয়ে রহিমার লাশ উদ্ধার করে। ১৩ ডিসেম্বর জাকির তার স্ত্রী রহিমাকে হত্যা করে ঘরের মধ্যে রেখে বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে পালিয়ে যায়। এব্যাপারে নিহত রহিমার খাতুনের ছেলে মণিরামপুরের খাটুরা গ্রামের হাসানুজ্জামান টুটুল বাদী হয়ে জাকির হোসেনকে আসামি করে কোতয়ালি থানায় হত্যা মামলা করেন।#