শহিদ জয়, যশোর
যশোর বেনাপোলের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বিপুল সোনা পাচার হয় ভারতে। বিনিময়ে ভারত থেকে আসে বিভিন্ন প্রকার অস্ত্র এবং ফেন্সিডিলসহ মাদকের বড় বড় চালান। দক্ষিণ-পশ্চিমা লের মধ্যে সব থেকে বেশি সোনা পাচার হয় বেনাপোলের পুটখালী সীমান্ত দিয়ে। আন্তর্জাতিক সোনা পাচার সিন্ডিকেটের হোতাদের আবাসস্থল হচ্ছে সীমান্ত এলাকা পুটখালী। যাদের মাধ্যমে এই সোনা পাচার করা হয়। তাদের মধ্যে অন্যতম ডন হচ্ছে পুটখালীর ‘কুখ্যাত’ রমজান। যার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ সোনা ঢাকা থেকে আসে, যা পাচার করা হয় ভারতে গৌতমের ডেরায়। অভিযোগ রয়েছে, সোনা পাচারে সবার উপরে রয়েছে বেনাপোল পোর্ট থানার সীমান্তের অবৈধ ঘাটগুলি। বেনাপোলের যে সব সিন্ডিকেট আছে তাদের অধিকাংশের মূল মালিক হচ্ছে দক্ষিণ-পশ্চিমা লের মূল হোতা হচ্ছে আলোচিত নাসির। এই চক্রের সেকেন্ড ইন কমান্ড হচ্ছে, সোনা-অস্ত্র ও ফেন্সিডিল ‘কুখ্যাত’ রমজান। ঘরামির ছেলে থেকে অপরাধ কর্মকান্ডের মাধ্যমে বনে হয়ে গেছে কোটি কোটি টাকার মালিক। পুটখালী, বেনাপোল, যশোর, ঢাকা এবং ভারতে তৈরি হয়েছে আলীশান বাড়ি।
সীমান্তের সূত্রগুলো বলছে, আন্তর্জাতিক সোনা পাচার সিন্ডিকেটের হোতাদের অন্যতম ডন হচ্ছে পুটখালীর ‘কুখ্যাত’ রমজান গড়ে তুলেছে বিশাল সাম্রাজ্য। পাচারকারী ছাড়াও এই চক্রের রয়েছে বিশাল বাহিনী। যাদের কোমরে থাকে বিভিন্ন প্রকারের অস্ত্র। এই অস্ত্রের চালান আসে ভারতের ওপারের বস্ গৌতম ও অপুসহ বিভিন্ন ডেরা থেকে। বিশেষ করে রমজানের সিপাহশালার খ্যাত মহব্বত, মিলন সরদার, আলম সরদার, হাসান, কদম আলী, মনি, বিল্লাল, হাবিবুর (ডিপজল) মুনছুর সহ অন্ততঃ ২০/২৫ জন ক্যাডার রয়েছে এই সিন্ডিকেটের। যারা ঢাকা থেকে সোনা বহন করে নিয়ে আসে। যা সীমান্ত পার করে পৌছে দেয়া হয় বস্ গৌতম ও অপু সহ বিভিন্ন চোরাচালানীর ডেরায়। প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ সোনার চালান ভারতে পাচার করে এই চক্র। বিনিময়ে পাচার করে আনে অস্ত্র এবং ফেন্সিডিলের চালান। ঘরামির ছেলে রমজানের কোটিপতি হওয়ার পেছনে রয়েছে নানান রহস্য। বিশ^স্ততার সুযোগ নিয়ে এরা ছোট-বড় সোনার চালান হজম করে দেয়। গতমাসেই এমন একটি ঘটনা ঘটেছে যাতে আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছে আলোচিত নাসির এবং রমজান। ঢাকার আওলাদ, ইমরান এবং আরিফের ১২ গাড়ি অর্থাৎ ১২০ পিস সোনা পাচারের জন্য নিয়ে আসে ‘কুখ্যাত’ রমজান সিন্ডিকেটের ক্যাডাররা। যা ভারতে অপুর ডেরায় পৌছে দেয়ার কথা ছিল। বস্ গৌতমের পরামর্শে সোনার চালানটি গন্তব্য পর্যন্ত পৌছেনি। যশোর পর্যন্ত পৌছে দেয় আওলাদের একটি প্রাইভেটকারে করে। যশোর পর্যন্ত সোনার চালানটি নিয়ে আসে মিলন সরদার। যশোর থেকে ১২০ পিস সোনার বার সীমান্তে ফৌছানোর দািিয়ত্ব পড়ে দুর্ধর্ষ আলম এবং হাসানের উপর। পথিমধ্যে এই চালানটি হজম করে দেয়ার পরিকল্পনা করে আলোচিত সোনা পাচারের স¤্রাট নাসির এবং ‘কুখ্যাত’ সেই রমজান গং। সে মোতাবেক যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার বাকড়ার বিষ্ণুপুরে আসার পর সোনার বার কেড়ে নেয়ার নাটক সাজিয়ে স্বর্ণ চালানটি হজম করে এই চক্র। এদের সাথে ‘দু’জন রক্ষক’ও জড়িত ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। যা উদ্ধারের নাটক সাজিয়ে সেচ্ছায় পুলিশের হাতে ধরা পড়ে রমজানের ম্যানেজার এবং নাসিরের ম্যানেজার সহ ১১জন। সীমান্তের সূত্রগুলো আরও বলছে, ভারতের অপু সিন্ডিকেটের হোতাদের কাছে সোনা লুটের ঘটনা প্রমাণ করতেই কথিত সোনা লুটের কিছুক্ষণ পরেই ঘটে আরেক নাটক। ২৫/২৬টি মোটরসাইকেলে করে সেখানে পৌছে যায় গোল্ড-অস্ত্র ও ফেন্সি স¤্রাট রমজানের সিপাহশালার মহব্বতসহ অন্ততঃ ৫০ জন ক্যাডার ফ্লিমি ইস্টাইলে এসে যশোর-ল-১১-৬৮০৬ নাম্বারের মোটরসাইকেলটি তাদের দাবি করে নিয়ে যাওয়ার নাটক করে। যার এক পর্যায়ে এরা পরিকল্পনা মাফিক বাঁকড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশের কাছে ধরা দেয়। এসময় পুলিশ এই চক্রের ১১ জনকে আটক এবং ১৩টি মোটরসাইকেল জব্দ করে বলে। ১৭ এপ্রিল রবিবার সকালে পুলিশ যাদের আটক দেখিয়েছে তারা সবাই সোনা-অস্ত্র এবং মাদক চোরাচালান সিন্ডিকেটের সক্রিয় সদস্য। আটককৃতরা হলো-সীমান্তবর্তী শার্শা উপজেলার পুটখালী গ্রামের মোজাম্মেল হক সরদারের ছেলে গোল্ড-অস্ত্র ও ফেন্সি স¤্রাট রমজানের সিপাহশালার মহব্বত আলী, ইমাদ মোড়লের ছেলে যুবলীগ নেতা বাবু হত্যা মামলার চার্জশীটভুক্ত আসামি নাসির উদ্দীন, হাশেম আলীর ছেলে ফেন্সী ব্যবসায়ী অসীম উদ্দীন, আব্দুল কাদেরের ছেলে মনিরুজ্জামান ওরফে রুহুল আমীন, আবুল খায়েরের ছেলে খোরশেদ ওরফে মোরশেদ আলী, দেলবার মোড়লের ছেলে নুর হোসেন, ইদ্রিস আলীর ছেলে মিলন কবীর, বালুন্ডা গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে বোমাবাজ আশিকুর রহমান, বারোপোতা গ্রামের মোহর আলীর ছেলে আব্বাস আলী, তৈয়বুর রহমানের ছেলে আলাউদ্দীন ও বাগআঁচড়া গ্রামের রেজাউল মোড়লের ছেলে সজীব হোসেন। পুলিশ ১৮ মে তাদের কোর্টে সোপর্দ করে। আশ্চার্যজনক হলেও সত্য আইনের ফাঁক-ফোঁকর গলিয়ে অতিদ্রুতই তারা তৃপ্তির হাসি হাসতে হাসতে বেরিয়ে আসে। আন্তর্জাতিক সোনা পাচারের দুই ডন এই প্রক্রিয়ায় হাতিয়ে নেয় কয়েক কোটি টাকা। সীমান্তের সূত্রগুলোর মতে, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান চললেও সোনা পাচারের এসব সিন্ডিকেটের অঘোষিত মালিকরা রয়ে যায় বহাল তবিয়তে। আর সোনা আটকের ব্যাপারে বিজিবি যতটা তৎপর সরকারের আর কোন সংস্থা বা বাহিনীকে এ বিষয়ে ততোটা তৎপর দেখা যায়নি। সীমান্তের সূত্রগুলি জানায়, বেনাপোলে সোনা পাচারের শীর্ষ দুই ডনের মধ্যে রমজান একজন। এই চক্র সহ এদের আন্ডারে থাকা ক্যারিয়াররা ঢাকার বায়তুল মোকাররম সোনার মার্কেটসহ পল্টন এবং পুরান ঢাকার তাঁতীবাজারের নির্ধারিত ডিলারদের কাছ থেকে সোনার চালান নিয়ে আসে। এসব সোনার চালান নিয়ে রমজান এবং তার বাহিনী পৌছে দেয় ভারতের সবচেয়ে বড় ডিলার অপু, বস্ গৌতম, ছোট গৌতম, দীপাঙ্কর, রাজীব, অজয়, পিন্টু, বরুণ, অনূপ, ডাকুসহ বিভিন্ন সিন্ডিকেটে। সূত্র আরও জানায়, ভারতের সোনা ব্যবসায়ীরা লুফে নিচ্ছে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া সোনার বার। আর সোনার বার পাচার এবং হজম করে কোটি কোটি টাকা লুফে নিচ্ছে রমজান গং। এভাবেই গরীব কামলা ঘরামির ছেলে রাতারাতি বনে গেছে টাকার কুমির। অদৃশ্য কারণে কেউ তাদের রুখতে পারছে না। এ বিষয়ে বেনাপোল পোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল উদ্দীন ভূইয়া বলেন, ‘আমি আন এথিক্যাল কোন কাজ করি না। সোনা পাচার যারা করছে তাদের ব্যাপারে আমার কোন আপোষ নেই। সব অপরাধীই আমার কাছে এক। অপরাধীদের ব্যাপারে আমার কোন ছাড় নেই।’
সোনা পাচারের বিষয়ে যশোর ব্যাটালিয়ান (৪৯বিজিবি)-র সিও লে. কর্ণেল শাহেদ মিনহাজ বলেন, ‘যার যার অবস্থান থেকে সকলকে তৎপর হতে হবে। বিজিবি যেমন তৎপর, সকলকেই তেমন তৎপর হতে হবে। যেটি কার্যকরী তৎপরতা হতে হবে। আমাদেরকে সমন্বিত ভাবে অপারেশন করতে হবে।’ খুলনা ব্যাটালিয়ান (২১ বিজিবি)-র সিও লে.কর্নেল তানভীর রহমান (পিএসসি, ইঞ্জিনিয়ার্স) সোনা পাচার রোধ প্রসঙ্গে বলেন, ‘চোরের চুরি থামানো যাবে না। যার যেটা অভ্যাস সেটা পুরাপুরি নিমূল করা সম্বব নয়। কারণ, অভ্যাস মানুষের এমন হয়ে যায় যে, অনেক সময় দেখবেন প্রাচুর্যপূর্ণ শিক্ষিত মানুষও কিন্তু ঘুষ খায়। তার বেতন বাড়াবেন বা সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করবেন মানে কিন্তু সে ঘুষ খাওয়া বন্ধ করবে এরা কিন্তু সব সময় সত্যি নয়। কারণ চাওয়ার কোন শেষ নেই। এই সমাজে খারাপ লোক কিন্তু খুবই কম। আমরা ভালো লোকই বেশি। জেনারেল এ্যাওয়ারনেসটা যদি বাড়ানো যায়। আমরা যদি বর্ডারের লোকেদের সাথে কানেকটিবিটিটা বাড়াতে পারি। বর্ডারের লোকাল মানুষকে নিয়ে যদি সমন্বিত কমিউিনিটি বর্ডার ম্যানেজমেন্ট ব্যবস্থার মাধ্যমে সোনা পাচার বন্ধ করা সম্ভব বলে আমার বিশ্বাস