বেনাপোল পৌর ট্রাক টার্মিনাল ঘিরে চাঁদাবাজি তুঙ্গে

যশোর প্রতিনিধি
যশোরের বেনাপোল পৌর ট্রাক টার্মিনাল ঘিরে ট্রাক চালকদের জিম্মি করে বেশুমার চাঁদাবাজি করছে একটি চক্র। প্রভাবশালী এই চক্রের অবৈধ চাঁদাবাজির প্রতিবাদে বিগত দিনে বেনাপোল স্থলবন্দর ব্যবহারকারী সংগঠনগুলো আন্দোলন করেছে। আবার জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ করা হলেও চক্রের সদস্যরা কোনো কিছুর তোয়াক্কা করছে না। তারা অবৈধভাবে চাঁদাবাজি করে যাচ্ছে। টার্মিনালে ট্রাক না রাখলেও টাকা গুনতে হচ্ছে চালকদের। চাঁদার টাকা দিতে অস্বীকার করলেই চক্রের সদস্যরা ট্রাকের জানালার গ্লাস ভেঙে দেয়াসহ চালকদের মারপিট করছে। চাঁদাবাজি বন্ধের দাবি জানিয়ে সর্বশেষ ১৩ মার্চ (বুধবার) বেনাপোল পোর্ট থানার অফিসার ইনচার্জের (ওসি) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন যশোর জেলা (ঝিকরগাছা, শার্শা ও বেনাপোল বন্দর) ট্রাক ট্যাংকলরী (দাহ্য পদার্থ বহনকারী ব্যতিত) ট্রাক্টর ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতি। যার অনুলিপি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, শার্শা আসনের এমপি আলহাজ শেখ আফিল উদ্দিন ও পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন দফতরে পাঠানো হয়েছে।
সংগঠনের বেনাপোল কার্যালয়ের চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিন গাজী স্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, সরকার প্রতি বছরে বেনাপোল বন্দরের মাধ্যমে ৫৫০০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করে থাকে। এই বন্দরের সুনাম ক্ষুন্ন করতে স্থানীয় ট্রাক মালিক সমিতি ও ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতিসহ অন্যান্য সংগঠনের সাথে আলোচনা না করে ২০২১ সালের ১৩ এপ্রিল থেকে স্থানীয় ৮/১০ জন সন্ত্রাসী পৌরসভার নামে বেনাপোল বাইপাস সড়কে ট্রাক চালক , হেলপারকে লাঠিসোটার ভয় দেখিয়ে বেনাপোল ট্রাক টার্মিনালে প্রবেশ করাতে বাধ্য করছে। এরপর তাৎক্ষণিক ট্রাক বের করে দিয়ে প্রতি ট্রাক ১শ’ করে চাঁদা আদায় করছে। সেই হিসেবে প্রতিদিন ৫৫০ টি ট্রাক চালককে জিম্মি করে ৫৫ হাজার টাকা চাঁদা নিচ্ছে দুর্বৃত্তরা। এতে প্রতি বছর চক্রের অবৈধ আয় হচ্ছে দুই কোটি পচাত্তর হাজার টাকা। অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, যশোর জেলা (ঝিকরগাছা, শার্শা ও বেনাপোল বন্দর) ট্রাক ট্যাংকলরী (দাহ্য পদার্থ বহনকারী ব্যতিত) ট্রাক্টর ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতি বন্দর হতে ট্রাকে পণ্য লোডের সময় ট্রাক টার্মিনাল ফি বন্দরের চার্জের সাথে ট্রাক প্রতি এক শত চুয়াল্লিশ টাকা সত্তর পয়সা, প্রতি ট্রাকের আনলোড ফি ১৪৫ টাকা হারে এবং প্রতি বছর টোকেন ফি বাবদ ৪৮ হাজার টাকা সরকারি তহবিলে জমা হয়। এরপরেও বেনাপোল ট্রাক টার্মিনালের নামে মোটা অংকের টাকা চাঁদাবাজি করা হচ্ছে।
একাধিক ট্রাক চালক জানিয়েছেন, পৌর ট্রাক টার্নিমালের সাইনবোর্ডের অন্তরালে সরকারি নির্দেশনা ছাড়াই অর্থ আয়ের ফাঁদ পাতা হয়েছে। এই ফাঁদে চালকদের জিম্মি করে প্রতিদিন অর্ধ লাখের বেশি টাকা চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। টার্মিনালে ট্রাক রাখলেও টাকা না রাখলেও টাকা গুনতে হচ্ছে। ট্রাক প্রতি ১শ’ টাকা নেয়া হচ্ছে। তারা জানান, বেনাপোল পৌর ট্রাক ট্রামিনালের সামনে গেলে সড়কে অবস্থান করা পেটুয়া বাহিনী জোরপূর্বক টার্মিনালে ঢুকিয়ে চত্রের সদস্যরা তার কাছে থেকে ১শ’ টাকা আদায় করে। টার্মিনাল ব্যবহার না করলেও তারা টাকা দিতে বাধ্য হয়েছেন। তাদের প্রশ্ন টার্মিনাল ব্যবহার না করেও কেনো চাঁদা গুনতে হবে। করোনাকালীন সময়ের মধ্যে এই ধরণের চাঁদাবাজি অত্যন্ত কষ্টদায়ক। চাঁদাবাজি বন্ধ করে চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন ট্রাক চালকরা।
ট্রাক চালক আলমগীর হোসেন জানান, বেনাপোল ফায়ার সার্ভিস অফিসের কাছে আসলেই চক্রের সদস্যরা বন্দরের বাইপাস সড়কে ট্রাক নিতে চালককে বাধ্য করে। পৌর ট্রাক টার্মিনালের সামনে যেতেই ট্রাক টার্মিনালের ভিতরে নিতে বলা হয়। টার্মিনালের ভেতর থেকে ঘুরে আসতেই ১শ’টাকা দাবি করা হয়। চালক টাকা দিতে অস্বীকার করায় তাকে হুমকি ধামকি দিয়ে ট্রাক আটকে রাখা হয়। আবার প্রায় দিন চালকদের মারপিটের ঘটনাও ঘটে। চাঁদাবাজ চক্রের কাছে ট্রাক চালকরা রীতিমতো জিম্মি হয়ে পড়েছে।
যশোর জেলা (ঝিকরগাছা, শার্শা ও বেনাপোল বন্দর) ট্রাক ট্যাংকলরী (দাহ্য পদার্থ বহনকারী ব্যতিত) ট্রাক্টর ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির বেনাপোল কার্যালয়ের চেয়ারম্যান ও বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজিম উদ্দিন গাজী জানান, বাংলাদেশের কোনো ট্রাক টার্মিনালের সেবা গ্রহণ না করলে চালকদের চাঁদা গুনতে হয়না। কিন্তু বেনাপোল ট্রাক টার্মিনালে অবস্থান না করলেও সন্ত্রাসীদের চাঁদা দিতে হচ্ছে। তিনি আরও জানান, সারাদেশে যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে মহাসড়কে অবৈধ টোল আদায় যখন বন্ধ তখন সম্পূর্ণভাবে নির্দেশ অমান্য করে বেনাপোল টার্মিনালের নামে চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। যা খুবই দুঃখজনক। অচিরেই চাঁদাবজি বন্ধ করে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তার।
বেনাপোল পোর্ট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কামাল হোসেন ভূইয়া জানিয়েছেন, যশোর জেলা (ঝিকরগাছা, শার্শা ও বেনাপোল বন্দর) ট্রাক ট্যাংকলরী (দাহ্য পদার্থ বহনকারী ব্যতিত) ট্রাক্টর ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগ পাওয়ার সাথেই একটি পক্ষকে ডাকা হয়। যেসব চালক বেনাপোল পৌর টার্মিনাল ব্যবহার না করবে তাদের কাছ থেকে টাকা না নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এরপরে নিয়মবহির্ভূতভাবে ট্রাক চালকদের কাছ থেকে টাকা নেয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।