যশোর প্রতিনিধি
যশোর ২৫০ বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে দুর্নীতি অনিয়ম জেঁকে বসেছে। চিকিৎসকদের দলবাজি আর সরকারি কর্মচারী ও স্বেচ্ছাসেবক নামধারী দালাল সিন্ডিকেটের অনৈতিক প্রভাবে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। চেইন অব কমান্ড বলতে কিছুই নেই। ওষুধ নেই। নেই পরীক্ষা-নীরিক্ষার সরঞ্জাম। এর ফলে চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে দূর-দুরান্ত থেকে চিকিৎসা নিতে আসা মানুষের।
সোমবার চিকিৎসা নিতে আসেন আব্দুল খালেক নামে এক বৃদ্ধ। বেলা সোয়া ১১টা। সুমন নামে এক প্রতিবেশির ঘাড়ে হাত রেখে পৌঁছান হাসপাতালে। ডাক্তারও দেখান কিন্তু প্যাথলজি বিভাগ তাকে হতাশ করে। তিনি বলেন, আমি ডায়াবেটিকসের রোগী। কিন্তু টেস্ট করাতে পারলাম না। মাইয়ারা (নার্স) কইছে সব রকমের টেস্ট করানো বন্ধ রয়েছে। হাসপাতালে এসে একটি এন্টাসিডও জুটলো না। এ সময় তার চোখে-মুখে হতাশার ছাপ লক্ষ করা যায়। তিনি খাজুরা থেকে এসে শূন্য হাতে বাড়ি ফিরছিলেন।
বারবাজার থেকে চিকিৎসা নিতে আসা বাসন্তি দেবনাথ বলেন, এখানে চেয়ার-টেবিলও টাকা চায়! তদ্বির ও টাকা, দুটোই লাগে। হাসপাতালে না পেয়ে বাইরের ফার্মেসি থেকে দেড়শ’ টাকার ওষুধ কিনে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন এই মধ্যবয়সী নারী।
যশোর সদরের বিরামপুর গ্রামের রহমত, আন্দোলপোতা গ্রামের আব্দুল করিম ও তার স্ত্রী সুরাইয়া বেগম সরকারি ওষুধ না পাওয়ার অভিযোগ করেন।
সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হাসপাতালের ফার্মেসি বিভাগে যোগাযোগ করে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। অনেক জরুরি ওষুধের সরবরাহ নেই দাবি করেন দায়িত্বরত কর্মচারী। তার মুখে মাস্ক ছিল। নাম বলতে রাজি হননি তিনি। তিনি বলেন, ওষুধের সংকট লেগেই আছে। হাতে-গোনা কিছু ওষুধ আছে। গত এক মাসে ওমিপ্রাজেল বা এন্টাসিডসহ গ্যাসের কোনো ওষুধ আসেনি। মাস কয়েক ধরে মৌসুমে রোগের ওষুধের সরবরাহ নেই। অতিগুরুত্বপূর্ণ মোনাস টেন, ফেক্সো, জিং সালফেটসহ অনেক ওষুধ নেই বলেও জানান এই কর্মচারী।
শহরের শংকরপুরের এএসকে সুমন নামে এক যুবক অভিযোগ করেন, রোববার দুপুর দেড়টার দিকে তিনি বেশ কিছু পরীক্ষা-নীরিক্ষার জন্য হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে যান। সেখানে রশিদ ছাড়াই টাকা চাওয়া হয়। তিনি বলেন, টাকাই যখন লাগবে তখন সরকারি হাসপাতালে লাইন না দিয়ে ক্লিনিকে পরীক্ষা-নীরিক্ষা করিয়েছি। তার অভিযোগ যশোর জেনারেল হাসপাতালে তদ্বিরের লোক থাকলে সব মেলে, না থাকলে কিছুই মেলে না। হাসপাতালে চেইন অব কমান্ড বলতে কিছুই নেই। যে যার মতো রোগীর পকেট কাটছে।
শহরের ষষ্টিতলাপাড়ার বাসিন্দা মুক্তি নন্দী জানান, বুধবার তিনি হাসপাতালে যান দুই মেয়ের রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করাতে। ১৩২ নম্বর কক্ষে প্রচুর মানুষের ভিড় ছিল। ভিড় সামলে ভেতরে যেতে প্রায় ঘন্টাখানেক সময় লেগে যায়। অভিযোগ করেছেন নওয়াপাড়া পৌর এলাকার বাসিন্দা জিন্নাত আলী, পলাশী গ্রামের নিয়ামত আলী ও নারাঙ্গালী গ্রামের আফসানা বেগম। তারা জানান, সরকারি উপবৃত্তি পেতে বাচ্চাদের রক্তের গ্রুপ করাতে হচ্ছে। স্কুল থেকে চাওয়া হচ্ছে। সে কারণেই হাসপাতাল থেকে তারা রক্তের গ্রুপ নির্ণয় অনেক কষ্ট করিয়েছেন।
হাসপাতালের গাইনি বিভাগে দুপুর সাড়ে বারোটায় ডাক্তার দেখাতে আসেন আসেন সীমা রামনগর ইউনিয়নের বাড়ি তার গাইনি বিভাগের 113 নম্বর কক্ষের চিকিৎসক সীমা নামের ওই নারীকে ভায়া টেস্ট করার জন্য লেখেন ভাইয়া টেস্ট করতে গেলে সেখানে সেখানে আছে সেবিকা হীরা তিনি সীমা নামের রোগীর সাথে খারাপ ব্যবহার করেন এছাড়াও সেবিকা হীরা বিভিন্ন রোগীর কাছ থেকে ভাড়া পরীক্ষা করানোর জন্য টাকা নিয়ে থাকে না টাকা নিয়ে থাকেন এমন অভিযোগ করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন রোগী। টলি বা হুইলচেয়ারে করে রোগী এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিতে গেলে টাকা দেওয়া লাগে। ড্রেসিং করাতে গেলে টাকা দেওয়া লাগে। ক্যাথেটার পড়াতে গেলে টাকা দেওয়া লাগে। রোগীর নাকে নল পড়াতে গেলে টাকা দেওয়া লাগবে এমন ভাবে চলছে যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল।
এ ব্যাপারে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার আখতারুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, হাসপাতালে কর্মরতরা চিকিৎসাসেবা নিয়ে আন্তরিক না হলে তার একার পক্ষে যে সব বিষয় সামাল দেয়া সম্ভব না