যশোর প্রতিনিধি: যশোরে আমিনুর রহমান বিষে হত্যা মামলার চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। ৬ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে এই চার্জশিট দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা কোতয়ালি থানার এসআই সেকেন্দার আবু জাফর। চার্জশিটে এজাহারভুক্ত ৫ আসামির অব্যহতির আবেদন জানানো হয়েছে।
অভিযুক্তরা হলেন, সদর উপজেলার বালিয়া ভেকুটিয়া কলোনিপাড়ার জসিমের বাড়ির ভাড়াটিয়া দেলোয়ার হোসেনের ছেলে সাইফুল ইসলাম সাগর (২৯), শহরের বারান্দী মোল্লাপাড়া কবরস্থান এলাকার আব্দুল কাদেরের ছেলে রাকিব হোসেন (২২), বারান্দী মোল্লাপাড়া আমতলা খেলার মাঠ এলাকার লাল বাবুর ছেলে আসিফ আহমেদ (২২), বারান্দী মোল্লাপাড়া কবরস্থান এলাকার হান্নানের দোকানের গলির লাল মিয়ার ছেলে নাসির হোসেন (২৬), আরবপুর মোড় এলাকার নজরুল ইসলাম বাবু ওরফে কসাই বাবুর ছেলে নাঈম হোসেন ওরফে ঠোঁটকাটা নাঈম (২৪) ও হাশেম আলীর ছেলে সাইদুজ্জামান বাবু ওরফে দাঁতাল বাবু (৪৫)।
তদন্ত সূত্রে জানা যায়, হত্যাকাণ্ডের শিকার আরবপুর তালপট্টির মৃত আব্দুল মালেকের ছেলে বিষে ও চার্জশিটভুক্ত আসামি সাগর এক সাথে চলাফেরা করতেন। তারা বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে চাঁদাও আদায় করতেন। এক পর্যায়ে বিষের সাথে চলাফেরা বন্ধ করে দেন সাগর।
চাঁদাবাজিও বন্ধ করে দেন। পরে ২০২০ সালের নভেম্বরের প্রথম দিকে সাগর সদর উপজেলার মহাদেবপুর গ্রামের আলী আহমেদের পুকুর খনন করে উত্তোলিত বালু নেয়ার জন্য ১ লাখ টাকা চুক্তিবদ্ধ হন। অর্থাৎ সাগর ১ লাখ টাকা দিবেন আলী আহমেদকে এবং নিজে উত্তোলিত বালু নিবেন। এ জন্য সাগর পুকুর মালিককে অগ্রিম ৫০ হাজার টাকাও দেন। কিন্তু এরই মধ্যে বিষে দলবল নিয়ে মহাদেবপুরে গিয়ে সাগরের বালু উত্তোলনের পাইপ ভেঙে দেন। প্রতিবাদ করায় বিষে ৪০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন সাগরের কাছে। কোনো উপায় না পেয়ে সাগর ৫ হাজার টাকা চাঁদা প্রদান করেন। পরে সাগর আরবপুর মোড়ে দাঁতাল বাবুর কাছে গিয়ে বিষের বিরুদ্ধে নালিশ করেন। কিন্তু সন্ত্রাসী দাঁতাল বাবু দুজনকে ডেকে বৈঠক করলেও বিষের চাঁদার বাকি ৩৫ হাজার টাকা দেয়ার জন্য সাগরকে বলে দেন। ২০২০ সালের ২০ ডিসেম্বর রাতে ৩৫ হাজার টাকার মধ্যে ১৫ হাজার টাকা যোগাড় করে আরবপুর মোড়ে যান বিষেকে দেয়ার জন্য। কিন্তু বিষে ওই টাকা না নিয়ে চড় থাপ্পর মেরে তাড়িয়ে দেন। পরদিন ২১ ডিসেম্বর বেলা ১১টার দিকে বিষে দলবল নিয়ে মহাদেবপুরে গিয়ে সাগর ও পুকুর মালিকের ছেলে সাইফুলকে প্রচণ্ড মারধর করেন। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে বিকেল ৩টার দিকে দাঁতাল বাবুর নির্দেশনা অনুযায়ী সাগর তার পূর্ব পরিচিত ঠোঁটকাটা নাঈম, রাকিব, আসিফ ও নাসিরকে নিয়ে আরবপুরের আসলামের হোটেলে গিয়ে সেখানে অবস্থানরত বিষেকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন।
এদিকে, হত্যার ঘটনায় পরে নিহতের ছোটভাই শুভ হাওলাদার ৬ জনের নাম উল্লেখ করে কোতয়ালি থানায় একটি মামলা করেন। এরা হলেন, বালিয়া ভেকুটিয়া গ্রামের সাগর, তার ভাই আকাশ, আনছার আলীর ছেলে তরিকুল ইসলাম কর্ণ, পুরাতন কসবা কাজীপাড়ার মৃত সিদ্দিকুর রহমানের ছেলে ফেরদাউস হোসেন সোমরাজ, বালিয়া ভেকুটিয়া গ্রামের শামসুদ্দিনের ছেলে নাঈম হোসেন ও ওয়াহিদের ছেলে রুবেল।
তদন্ত কর্মকর্তা জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে প্রথমে সন্দেহভাজন আসামি রাকিব, নাসির ও আসিফকে আটক করা হয়। আটকের পর তারা হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। পরে তাদের আদালতে সোপর্দ করা হলে তারা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এরপর সাগরকে আটক করা হলে তিনিও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
এই ৪ জনের জবানবন্দিতে থেকে জানা যায়, হত্যার সাথে এজাহারভুক্ত সোমরাজ, রুবেল, নাঈম, কর্ণ ও আকাশ জড়িত নন। এ কারণে চার্জশিটে তাদেরকে হত্যা মামলা থেকে অব্যহতির আবেদন জানানো হয়েছে।