যশোর প্রতিনিধি
খুলনার ফুলতলায় পাশবিক নির্যাতনের পর গলাকেটে হত্যা করা তরুণী মুসলিমার মাথা উদ্ধার হয়েছে। শনিবার বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে ফুলতলার যুগ্নিপাশায় একটি নির্মাণাধীন ভবনের বাথরুম থেকে তার মাথা উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত দুই যুবককে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
র্যাব-৬ এর পরিচালক লে. কর্নেল মুহাম্মদ মোসতাক আহমদের নেতৃত্বে এ উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা হয়।
মুহাম্মদ মোসতাক আহমদ জানান, মাথাবিহীন বিবস্ত্র তরুণীর মরদেহ উদ্ধারের খবর জানার পর র্যাব সোহেল ও রিয়াজ নামে দুজনকে শুক্রবার গ্রেপ্তার করে। মুসলিমার কাটা মাথার সঙ্গে একটি বটিও উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাবের এ কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রিয়াজ স্বীকার করেছেন, এর আগেও প্রতারণার মাধ্যমে অনেক মেয়ের জীবন নষ্ট করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় হত্যাকাণ্ডের তিন দিন আগে রিয়াজের সঙ্গে মুসলিমার পরিচয় হয়। এরপর তারা এক সঙ্গে দেখা করার জন্য মনস্থির করেন। এজন্য রিয়াজ তার সঙ্গে সোহেলকে রাখেন। রাত ৮-৯টার দিকে মেয়েটিকে বাড়িতে নিয়ে এসে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে তাকে দুইঘণ্টা ধরে পাশবিক নির্যাতন করা হয়।
তিনি বলেন, মেয়েটি যখন বুঝতে পারে সে প্রতারণার মধ্যে পড়েছে তখন ছাড়া পাওয়ার জন্য বার বার আকুতি করেছিল। কিন্তু তাকে ছেড়ে দিলে ফেঁসে যাওয়ার ভয়ে হত্যার পরিকল্পনা করেন রিয়াজ ও সোহেল। পরিকল্পনা অনুযায়ী, মুসলিমাকে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে রাস্তার দিকে নিয়ে যান তারা। পথে পেছন দিক থেকে মুসলিমার গলা চেপে ধরে ওড়না পেঁচিয়ে তার হত্যা নিশ্চিত করেন রিয়াজ ও সোহেল। পরে বিষয়টি অন্যখাতে প্রবাহিত করতে তারা মুসলিমার লাশ নিয়ে ওই বাড়িতে রাখেন। এসময় সোহেল ও রিয়াজ মরদেহকে বিবস্ত্র করে ফের পাশবিক নির্যাতন করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার দুজন জানান, লাশ ফেলে রাখলে ধরা পড়ার ভয়ে রিয়াজের বাড়ি থেকে বটি নিয়ে মেয়েটির মাথা বিচ্ছিন্ন করা হয়। মুসলিমার পরনের কাপড় দিয়ে তার মাথা ঢেকে ওই বাড়ির বাথরুমে লুকিয়ে রেখে যে যার বাড়ি চলে যান।
বুধবার সকালে ফুলতলার উত্তরডিহি এলাকার ধান খেত থেকে মুসলিমার মাথাবিহীন বিবস্ত্র লাশ উদ্ধার করা হয়। তখন তার পরিচয় পাওয়া যায়নি। পরে লাশের আঙ্গুলের ছাপের মাধ্যমে পরিচয় শনাক্ত করা হয়। লাশের ময়নাতদন্ত শেষে বৃহস্পতিবার দাফন করা হয়।
এ ঘটনায় নিহত মুসলিমার বোন আকলিমা খাতুন বাদী হয়ে ফুলতলা থানায় অজ্ঞাত পাঁচ-ছয় জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেছেন।
প্রেমের সম্পর্কের জেরে মোবাইলে কল পেয়ে মুসলিমা রাত আনুমানিক সাড়ে ৮টার দিকে বের হলে পরে তাকে পাশবিক নির্যাতন ও হত্যা করা হয় বলে এজহারে তিনি উল্লেখ করেন।
এদিকে মুসলিমার খণ্ডিত মাথা উদ্ধারের সময় তার বোন ও স্বজনরা উপস্থিত থেকে আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শান্তির দাবি করেন।