যশোর প্রতিনিধি
মাতৃসেবায় অপচিকিৎসায় আবারও রোগীর মৃত্যু যশোরের বহুল বিতর্কিত মাতৃসেবা ক্লিনিকে আবারও রোগী মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। মৃত রোগীর নাম আসমা বেগম (৩২)। মৃতের স্বামীর অভিযোগ, ডাক্তার মোজাম্মেল হোসেন ত্রুটিপূর্ণ অপারেশন করায় তার স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে। ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন মহলে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন ওই ডাক্তার। মৃত আসমা ঝিকরগাছা উপজেলার বামনআলী চাপাতলা গ্রামের গোলাম রসুলের স্ত্রী।
গোলাম রসুল অভিযোগ করেছেন, গত ১৫-১৬ দিন যাবৎ তার স্ত্রী পেটে ব্যথায় ভুগছিলেন। তিনি স্থানীয় এক গ্রাম ডাক্তারের মাধ্যমে শনিবার বিকেলে যশোর শহরের মাতৃসেবা ক্লিনিকে স্ত্রীকে ভর্তি করান। ডাক্তার রোগীর বিবরণ শুনে স্বজনদের জানান, রোগীর অ্যাপেন্ডিক্স হয়েছে। অপারেশন করাতে হবে। স্বজনরা ডাক্তার মোজাম্মেল হোসেনের কথা মতো অপারেশন করাতে রাজি হন। রোববার সকালে ডাক্তার মোজাম্মেল অ্যানেস্থেসিস্ট ছাড়া নিজেই রোগীকে অজ্ঞান করে অপারেশন করেন। এরপর দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পর রোগীর জ্ঞান ফিরলে ব্যথায় চিৎকার করে ওঠেন। রোগীর স্বজনরা বিষয়টি ওয়ার্ডের সেবিকাদের জানালে ডাক্তার আবারও অজ্ঞানের ইনজেকশন দেন। এরপরে রোগীর আর জ্ঞান ফেরেনি। পরে ডাক্তার মোজাম্মেল হোসেন দ্রুত খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন ওই রোগীকে। সেখানে আইসিইউতে নিয়েও চিকিৎসকরা আসমার জ্ঞান ফিরাতে না পেরে সোমবার মৃত ঘোষণা করেন। পরে দুপুরে বাড়িতে এনে লাশ দাফন করা হয়।
সূত্র জানায়, পূর্বে মাতৃসেবা ক্লিনিকের নাম ছিল নূরমহল। বিভিন্ন অনিয়মের কারণে ২০১৯ সালের ২ নভেম্বর নূরমহলের লাইসেন্স বাতিলের পত্র আসে সিভিল সার্জন অফিসে। এ কারণে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়। নূরমহলের লাইসেন্স বাতিলের কয়েকদিন পরেই সেখানে মাতৃসেবা ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয়া হয়। নাম পরিবর্তন হলেও সেখানে সবকিছুই নূরমহলের। ১০ শয্যার প্রতিটি হাসপাতাল অথবা ক্লিনিকে রোগী প্রতি ফ্লোর স্পেস থাকতে হবে ন্যূনতম ৮০ বর্গফুট। জরুরি বিভাগ, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঝুঁকিমুক্ত অপারেশন থিয়েটার, চিকিৎসার জন্য যন্ত্রপাতি, ওষুধ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরি। শর্তানুযায়ী তিনজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, ডিপ্লোমাধারী দু’জন সেবিকা, তিনজন সুইপার ও আটশ’ বর্গফুট জায়গা থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু মাতৃসেবা ক্লিনিক অনুমোদন পাওয়ার পর মালিক পক্ষ এসব স্বাস্থ্য নীতিমালা উপেক্ষা করে আসছে।
এ ব্যাপারে ডাক্তার মোজাম্মেল হোসেন জানান, তিনি রোগীকে সঠিক চিকিৎসা দিয়েছেন। রোগীর অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাকে খুলনায় রেফার করা হয়েছিল। তার ক্লিনিকে রোগীর মৃত্যু হয়নি। এ জন্য রোগীর মৃত্যুর ব্যপারটি তার ওপর বর্তায় না।
সিভিল সিভিল সার্জন বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস জানান, এ ব্যাপারে তার কাছে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। লিখিত অভিযোগ পেলে ওই স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যশোরে কোনো স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান অনিয়মের মধ্যে চলতে দেয়া হবে না।#