যশোর প্রতিনিধি: যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ইন্টার্ন ও কর্মচারীদের মাঝে গোলযোগের ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। বুধবার হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. হিমাদ্রি শেখরের কাছে তদন্ত প্রতিবদেন জমা দেয়া হয়। এই তথ্য নিশ্চিত করেছেনতদন্ত কমিটির সভাপতি মেডিকেল কলেজের সার্জারী বিভাগের অধ্যাপক ডা. এনকে আলম। এদিকে, তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছেন ইন্টার্ন ও কর্মচারী নেতৃবৃন্দ। তদন্ত প্রতিবেদন নিরপেক্ষ না হলে উভয় পক্ষ আন্দোলনের হুমকি দিয়েছে।
তদন্ত কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. এনকে আলম জানান, কমিটি গঠনের পর থেকেই অনাকাঙ্খিত ঘটনাটি গুরুত্বের সাথে তদন্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়। শেষ পর্যন্ত তারা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবেই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পেরেছেন। তিনি জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করার আগে ইন্টার্ন ও কর্মচারীদের মধ্যে কোনো পক্ষ দোষী তা বলা উচিৎ নয়।
ছুটিতে থাকার কারণে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (ওএসডি) ডা. আখতারুজ্জামানের সাথে। কিন্তু তার মুঠোফোনের নম্বরটি বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. হিমাদ্রি শেখর জানান, তদন্ত প্রতিবেদন তিনি গ্রহণ করেছেন। তবে সেটি খামে সিলগালা করা রয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক ছুটিতে থাকার কারণে খাম খোলা হয়নি। আজ (বৃহস্পতিবার) তত্ত্বাবধায়কের উপস্থিতিতে তদন্ত প্রতিবেদনের খামটি খোলা হবে। তদন্তে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, ইন্টার্ন ও কর্মচারীদের মাঝে গোলযোগের ঘটনার পর থেকেই দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছিলো। তাদের পাল্টাপাল্টি স্লোগানে হাসপাতালে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। চিকিৎসক সংগঠন নেতৃবৃন্দ ও হাসপাতালের কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনা সামাল দিয়েছিলেন। তারপরে উভয় পক্ষের মধ্যে চাপা ক্ষোভ রয়েছে। কর্তৃপক্ষের কাছে উভয়ে ঘটনার সঠিক বিচার দাবি করে আসছেন। তদন্তে একপেশে সিদ্ধান্ত নেয়া হলে আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছেন ইন্টার্ন ও কর্মচারীরা।
হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সহসভাপতি নাফিম ফাহমিম জানান, কর্মচারীদের বেপরোয়া আচরণে তারা মর্মাহত। ঘটনাটি চিকিৎসক সংগঠন ও হাসপাতাল কর্মকর্তাদের জানানো হয়। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত না হলে কঠোর কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা দেবেন।
হাসপাতালের ৩য় শ্রেণি কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক দিপক রায় জানান, ইন্টার্ন ও কর্মচারীদের গোলযোগের ঘটনার প্রথম থেকেই সঠিক বিচারের দাবি জানানো হচ্ছে। কমিটির নির্দেশনার কারণে তদন্ত কার্যক্রম চলাকালীন কোন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়নি। কর্মচারী পরিষদ তদন্ত কমিটির নির্দেশ মানলেও মানেননি ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ। তদন্ত চলাকালীন তারা (ইন্টার্ন) হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়কের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন। কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে কর্মচারীরা সব সময় শ্রদ্ধাশীল। আশা করছি ঘটনার সঠিক বিচার পাবো।
হাসপাতালের ৩য় শ্রেণি কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মোশারফ হোসেন জানান, গোলযোগের ঘটনায় সঠিক বিচার পাবো বলে আশা রয়েছে। তদন্ত নিরপেক্ষ না হলে জোটবদ্ধ কর্মচারীরা আন্দোলন শুরু করবেন। এই বিষয়ে নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন. ৩য় শ্রেণির কর্মচারী ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী পরিষদ আলোচনার মাধ্যমে এক মত পোষণ করেছেন।
উল্লেখ্য, গত ১৫ ডিসেম্বর হাসপাতালের এক্স-রে কক্ষে দায়িত্বরত কর্মচারী মেহেদি হাসানকে মারপিট করেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। এ ঘটনায় ইন্টার্ন ও কর্মচারীরা গোলযোগে জড়িয়ে পড়ে। পরে দফায় দফায় মিটিংয়ের মাধ্যমে ঘটনার রাতেই যশোর মেডিকেল কলেজের সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. এনকে আলমকে সভাপতি ও হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আনোয়ার হোসেনকে সদস্য সচিব করে ৬ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।