নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও কর্মমুখর যশোর আইটি পার্ক

যশোর প্রতিনিধি:
বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতায় তথ্য প্রযুক্তিতে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষকে সম্পৃক্ত করার সবচে’ বড় উদ্যোগ যশোরের শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক। গত এক যুগে যশোর ও এর আশপাশের এলাকার মানুষের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সেরা উপহার এ পার্কটি এখন পূর্ণউদ্যোমে কর্মমুখর। ২০ হাজার তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে দেশের প্রথম ডিজিটাল জেলা যশোরে অবস্থিত শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক। যশোর আইটি পার্ক নামে পরিচিত এ পার্কে শুধু রোবটের মতো কাজ কিংবা ব্যবসা নয়, বরং সেখানে গেলেই দেখা মিলবে পার্কের মূল ভবনের পাশে পাঁচ একরের বিশাল জলাধার। জলাধারের স্বচ্ছ পানিতে রয়েছে দেশি-বিদেশি নানা প্রজাতির মাছ, যা দেখে কাজের চাপ থেকে মিলবে প্রশান্তি। এছাড়া মূল ভবনের দক্ষিণ পাশে রয়েছে সবুজ বেষ্টনী। যেখানে কর্মীদের হাঁটার জন্য রয়েছে পথ। আধুনিক নির্মাণশৈলীতে নির্মিত এ পার্কটিতে কেবলই এখানকার বিনিয়োগকারী, কর্মীরাই ভিড় করেন না, প্রতিদিন আসেন প্রচুর দর্শনার্থী। আসেন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকরা। ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর পার্কটি উদ্বোধন করা হয়। বর্তমানে সেখানে ভাড়া দেয়া স্পেসের পরিমাণ ১ লাখ ৩৫ হাজার ২৮৫ বর্গফুট। প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার জনবল কাজ করছে। পার্কে বিনিয়োগকারীরা ১০ বছরের ট্যাক্স হলিডে সুবিধা পাচ্ছেন। এছাড়া ক্যাপিটাল মেশিনারি কাঁচামাল কেনার ক্ষেত্রে ট্যাক্সমুক্ত আমদানির সুযোগ পান। অভিজ্ঞ পেশাজীবীদের জন্য তিন বছরের আয়কর অব্যাহতি রয়েছে। এ বিষয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে ২০ হাজার তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। শহরের বেজপাড়া এলাকায় ২৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পের অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়। কম্পিউটারের সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ফ্রিল্যান্সিং, কল সেন্টার ও রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট-এই চারটি ক্ষেত্রে দেশ-বিদেশের আইটি (তথ্যপ্রযুক্তি) শিল্প উদ্যোক্তারা বিনিয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন। এছাড়া দেশের সবগুলো পার্কের নির্মাণকাজ শেষ হলে আইটি শিল্পের জন্য ২৮ লাখ ৭২ হাজার বর্গফুট স্পেস গড়ে উঠবে। এতে প্রায় ৩ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। জানা গেছে, প্রকল্পের মূল ভবনে ভূমিকম্প প্রতিরোধক কম্পোজিট কাঠামো (স্টিল ও কংক্রিট) নির্মাণ করা হয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, এখানে রয়েছে ১২ তলাবিশিষ্ট স্টিলের স্ট্রাকচারের ডরমেটরি ভবন ও ১৫ তলাবিশিষ্ট স্টিল স্ট্রাকচারের এমটিবি ভবন। এছাড়া রয়েছে ফাইবার অপটিক কানেক্টিভিটি। এই ভবনে বিনিয়োগের জন্য ১ লাখ ৬৮ হাজার ১৫৫ বর্গফুট ভাড়াযোগ্য স্থান রয়েছে। আরো রয়েছে চারটি লিফট, দুটি ডেডিকেটেড ফায়ার সিঁড়ি ও ২৫০ জন ধারণক্ষমতার অডিটোরিয়াম। সেন্ট্রাল এসিবিশিষ্ট বিজনেস সেন্টারটি তিনতলায়। এতে চারটি মিটিং রুম, তিনটি কনফারেন্স রুম, লাউঞ্জ, ডুপ্লেক্স রেস্টুরেন্ট, ৩৫০ জন ধারণক্ষমতার অডিটোরিয়াম, ২০০ জন ধারণক্ষমতার একটি ফুডকোর্ট ও ১০০ জন ধারণক্ষমতার একটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। ডরমেটরি ভবনটি ১২ তলাবিশিষ্ট। কক্ষ রয়েছে ৭৮টি। এর মধ্যে ৩০টি টুইন শেয়ার, ৩৬টি ডিল্যাক্স, ১২টি স্যুইট রুম। এছাড়া জিমনেশিয়াম, গেম জোন তো রয়েছেই। পুরো পার্কের পরিচালনা, ব্যবস্থাপনা ও বিপণনের দায়িত্বে রয়েছে বেসরকারি টেকসিটি বাংলাদেশ লিমিটেড। পার্কে মোট বিনিয়োগকারী ৫৬ জন। এর মধ্যে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন ৪৬ জন। সেখানে বিনিয়োগ করা যশোর আইটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাকিব হাসান বলেন, কারও অধীনে কাজ না করে এখন আমি ২০ থেকে ২৫ জনকে চাকরি দিতে পারছি। এখানে বড় সুবিধা হচ্ছে আইটির কোনো গণ্ডি নেই। আপনি পৃথিবীর যে কোনো স্থানে বসেই এখন কাজ করতে পারবেন। যে কোনো জায়গা থেকে আমার প্রোডাক্ট সেল বা বিক্রি করতে পারছি। এই পার্কে কাজ করার চ্যালেঞ্জ কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, চ্যালেঞ্জ তো আছেই। কারণ পার্কটি দেশের এক পাশে হওয়ায় দক্ষ মানুষ পাওয়া কঠিন। এজন্য আমরা যশোর আইটি ইনস্টিস্টিউট থেকে কিছু মানুষকে দক্ষ করে তুলছি। জানা যায়, পার্কের ভেতরে ২০১৫ সালে ৩ পেটাবাইট ক্ষমতার ডিজাস্টার রিকভারি ডাটা সেন্টার স্থাপন করা হয়। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের অধীনে তিন স্তরবিশিষ্ট ডাটা সেন্টার রয়েছে পার্কটিতে। কখনো দুর্যোগের কবলে পড়লে এই ডাটা সেন্টার থেকে তা উদ্ধার করা সম্ভব হবে। প্রতিষ্ঠার প্রায় ৪ বছর পরও যশোর সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে লক্ষমাত্রা অনুযায়ি কর্মসংস্থান হয়নি। ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পার্ক ছেড়ে গেছে ১৭ টি প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে বিদেশি গ্রাহকদের কাজ করতে পারছেন না এই পার্কের বিনিয়োগকারীর। ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে এরই মধ্যে ১৭ টি কোম্পানি এই পার্ক ছেড়ে গেছে। যেসব প্রতিষ্ঠান কাজ করছে তারাও নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছেন। এই আইটি পার্কটি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে পারছেনা। ৩৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র ১টি বিদেশি। দেশের সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা খাতের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস-বেসিস এর সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর বলেন, লক্ষমাত্রা অনুযায়ি কাজ না হলেও এই সফট্যওয়্যার পার্ক সম্ভাবনার নতুন দুয়ার উন্মোচন করেছে।তবে, হাইটেক পার্কের কর্মকর্তারা বলছেন, এটি সফল আইটি পার্ক হিসেবে গড়ে উঠছে।এই পার্ক আরো কার্যকর করতে বিনিয়োগকারীদের সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানের চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।