যশোরে ২০ লাখ টাকার মালামাল মাত্র ২ লাখ টাকায় নিলাম বাণিজ্যের অভিযোগ

যশোর প্রতিনিধি: যশোরে ভেজাল সারের সাথে সার তৈরীর বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ও বৈধভাবে কিনে আনা বিভিন্ন কেমিক্যাল নিলামের নামে সদর উপজেলা কৃষি অফিসার সাজ্জাদ হোসেন বাণিজ্য করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে । নিয়মবর্হিভূত নিলামে অনিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নাম মাত্র অংশগ্রহনকারী সাজিয়ে ২০ লাখ টাকার সার উৎপাদদের যন্ত্রাংশ ও মালামাল ২ লাখ টাকা বিক্রি করেছেন বলে কারখানা মালিক ও সংশ্লিষ্টদের মধ্যে চরম ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নির্দেশনার উপর জজ আদালতে আপিল করা হলেও তা ভুলুণ্ঠিত করেছেন উপজেলা কৃষি অফিসার। নিলামের নেপথ্যে কৃষি অফিসার বিশাল ব্যবসা করেছে বলেও কারাখানা মালিক ও শ্রমিক দাবি করেছেন। কারখানার মালিকের আবেদনের প্রেক্ষিতে জজ আদালত তদন্ত করে কারখানার বর্তমান অবস্থা জানাতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন।

যশোরে বেশ কয়েকটি সার কারখানায় ভেজাল সার উৎপাদন খবরে সম্প্রতি নড়েচড়ে বসে যশোর সদর উপজেলা কৃষি বিভাগ। দীর্ঘদিনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে মাঠে নামেন যশোর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন একাই। তিনি যশোর সদর উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের শেখহাটি গ্রামের দুটি ভেজাল প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনা করে তা বন্ধ করে দেয়। এছাড়া,গত ৫ আগস্ট যশোর সদর উপজেলার ঘুরুলিয়ার গ্রামের আনোয়ার হোসেন লাল্টুর সাউদার্ন কারখানায় অভিযান পরিচালনা করেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এনএম মুনিম লিংকন। অভিযানের সময় কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন, পুলিশ ও অন্য কয়েক কৃষি কর্মকর্তা ছিলেন। ওই দিন বিকেল সাড়ে ৪ টায় কৃষি বিভাগের এই অভিযানে জব্দ করা হয় আনুমানিক ২ টন ভেজাল টিএসপি, ২ টন দস্তা, ফুরাডান, সার তৈরির কাঁচামাল ১ হাজার বস্তা ম্যাগনেসিয়াম সালফেট ও ৪শ’ লিটার সালফিউরিক এসিড, জেনারেটর ও সার মিকচার মেশিন। ওই অভিযান কারখানার মালিক সোহানুর রহমান শিহাবকে জেল জরিমানা করা হয়। ওই সময় মালামাল উদ্দেশ্যে মূলকভাবে কৃষি কর্মকর্তা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ভূল বুঝিয়ে কারখানার সার উৎপাদনের যন্ত্রাংশ ও মালামাল জব্দ করেন। বৈধভাবে কেনা কেমিক্যাল ও যন্ত্রাংশ জব্দের বিপরীতে কারখানার মালিক সোহানুর রহমান শিহাব জজ আদালতে আপিল করেন । আপিলে বলা হয়েছে উদ্ধার হওয়া সব মালামাল জব্দ তালিকায় সুনিদিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি। মামলাটি ষড়যন্ত্রমুলক দাবি করা হয়েছে সার তৈরির সব কাগজপত্র থাকা সত্বেও শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে। এদিকে জজ আদালতে আপিল করা সত্বেও হঠাৎ করে বিপুল পরিমান মাল নিলাম দেখানো হয়েছে।
এদিকে কারাখানা মালিক সোহানুর রহমান শিহাব ও পরিচালনাকারী আনোয়ার হোসেন লাল্টু কারখানা জানিয়েছেন, কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেনসহ মোবাইল কোর্ট তার কারখানা থেকে ৮২ টন ম্যানেসিয়াম নিয়ে যায়। যার বাজার মূল্য ১৭ লাখ টাকা, ৩টি মিকচার মেশিন ২লাখ টাকা মূল্য ও ৭৫ হাজার টাকা মূল্যের জেনারেটন নিয়ে গেছে। সর্বমোট ২০ লাখ টাকার মাল নিলামের নামে ২ লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেবেন এটা কেমন কথা। নিলামের নামে শুভংকরের ফাঁকি দিয়ে সরকারকে ঠকিয়ে অর্থ বানিজ্য করেছেন কৃষি অফিসার। জজ আদালতে তিনি আপিল করেছেন। ২০ লাখ টাকার মাল ২ লাখ ২০ হাজার টাকায় নিলাম হল নেপথ্যে বিশাল বাণিজ্য হয়েছে। তারা এর প্রতিকার দাবি করেন।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগের ব্যাপারে কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন কারখানাটি সম্পূর্ণ অবৈধ। টাইলসের গাদ, ছাই, বালি, পাথরের কুচি, ডিনামাইট পাউডার, পোড়া মাটি জিপসাম, হাওর অঞ্চলের শামুকের কুচির সাথে রং দিয়ে ভেজাল সার বানানো হচ্ছিল। তিনটি দামি ব্রান্ড নকল করা হচ্ছিল। বিপুল পরিমাণ ও মালামাল উদ্ধারের পর অভিযানিক টিমের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নিবাহী কর্মকর্তার দিক নির্দেশনায় ওই মালামাল নিলাম করা হয়েছে। ম্যাগনেসিয়াম সালফেড, জেনারেটর ও মিকচার মেশিন মিলিয়ে ২ লাখ ২০ হাজার ৭শ’ টাকা নিলাম করে তা সরকারি কোষাগারে জমা দেয়া হয়েছে। ভেজাল কারখানা পক্ষ নানা কথা বলতে পারে। নিলামে কোনো অস্বচ্ছতা হয়নি। বিধি মেনে সব কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।
এদিকে কারাখানা পরিচালনাকারী আনোয়ার হেসেন লাল্টু তার সব মালামাল অবৈধ নয় বলে দাবি করে আদালতে কাছে কারাখানা খুলে দেয়ার জন্য আবেদন করেছেন। আদালত কারখানা কি অবস্থায় আছে তার খোঁজখবর নিয়ে আদালতকে অবহিত করতে ওসি কোতোয়ালিকে নির্দেশনা দিয়েছে।