মাধঘোপা নিউজ ডেস্ক: বহুলালোচিত অস্ত্র ব্যবসায়ী শার্শার আকুল চক্র গোয়েন্দা পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর চাঞ্চল্যকর তথ্যে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে গোয়েন্দা তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে। সীমান্ত এলাকা দিয়ে এনে কৌশলে আন্ডার ওয়ার্ল্ডে এই অস্ত্র-গুলি বিক্রি করা হচ্ছে এমন তথ্যও মিলেছে। এসব অবৈধ অস্ত্রের ক্রেতার তালিকায় রয়েছে রাজনৈতিক নেতা, জঙ্গি, পেশাদার কিলার ও অপরাধীরা। অস্ত্র ব্যবসায়ীদের নতুন একটি তালিকা তৈরির কাজও শুরু হয়েছে। বিশেষ করে আগামী ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে এ অভিযান অব্যাহত রাখা হবে বলেও দাবি গোয়েন্দা সূত্রের।
গত ১ আগস্ট দু’শতাধিক অস্ত্র বেচাকেনার হোতা বেনাপোলের আকুল হোসাইন ৮টি নাইনএমএম পিস্তলসহ আটক হয় ঢাকা ডিবি পুলিশের হাতে। এসময় তার আরো ৪ সহযোগী আটক হয়েছে। চক্রটি তক্ষক সাপ প্রতারণা, সীমান্ত পিলার, সাপের বিষ, গোল্ড স্মাগলিং, প্রত্নতাত্ত্বিক মূর্তি, ইয়াবা, আইস ও মাদক চোরাচালানের সাথেও প্রত্যক্ষভাবে জড়িত বলেও তথ্য পায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। বেনাপোলের মোস্ট ওয়ান্টেড আকুল ছাড়াও ওইদিন আটক হয় ওই এলাকার ইলিয়াস হোসেন, আব্দুল আজিম, ফারুক হোসেন এবং ফজলু রহমান। তাদের দখল থেকে অস্ত্র ব্যবসায় ব্যবহৃত একটি প্রাইভেটকার, আটটি বিদেশি পিস্তল, ১৬টি ম্যাগজিন ও আটটি গুলি উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য মেলে অস্ত্র ব্যবসায়ী চক্রের প্রধান আকুল হোসেন ২০১৪ সাল থেকে দুই শতাধিক অস্ত্র নিজে বিক্রি করেছে। চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন দেশের ও ব্রান্ডের অস্ত্র সরবরাহ করে। যশোরের অনেক ছিনতাইকারী, খুনী রাজনৈতিক চক্র ও ভাড়াখাটা একাধিক সন্ত্রাসী চক্রের সাথেও সখ্যতা রয়েছে আকুলের। আকুলসহ আটককৃতদের দেয়া তথ্যে মাঠে নেমেছে গোয়েন্দা শাখা। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে জোরেসোরে কাজ শুরু হয়েছে।
গোয়েন্দা সূত্র থেকে তথ্য মিলেছে, মহামারী করোনার প্রকোপ ও কঠোর নজরদারির মধ্যেও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্নস্থানে অবৈধ অস্ত্র কারবারীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সীমান্ত এলাকা দিয়ে খুবই কৌশলে আন্ডার ওয়ার্ল্ডে এই অস্ত্রগুলো বিক্রি করা হচ্ছে। এমনকি দেশব্যাপি ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। ১ আগস্ট ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে ৮টি বিদেশি পিস্তলসহ আকুল চক্র আটক হওয়ার পর মূলত পুলিশ নড়েচড়ে বসেছে।
সূত্রগুলোর দাবি, ইতোমধ্যে পুলিশ অস্ত্র ব্যবসায়ীদের নতুন একটি তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছে। আর তা যাচাই বাছাইয়ে কাজও শুরু হয়েছে। পুরোনো তালিকার সাথেও সমন্বয় চলছে। করোনার প্রকোপ কমে এলেই দেশের বিভিন্নস্থানে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রার্থীরাও জোরেসোরে মাঠে নেমেছেন। আর এই সুযোগে প্রার্থী বা তাদের সমর্থকরা ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছেন। বিশেষ করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বেড়ে গেছে অস্ত্র কেনাবেচা। সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ এলাকায় প্রভাব বিস্তার করার পাশাপাশি নিজেকে সুরক্ষিত রাখার জন্যও অস্ত্র সংগ্রহ করছেন। এমনকি এই অবৈধ অস্ত্রগুলো ডাকাতি ও চাঁদাবাজদের কাছেও পৌঁছে যাচ্ছে। এসব কাজে আগে যারা জড়িত ছিল তারা র্যাব ও পুলিশের অভিযানে দেশের বাইরে পালিয়ে গিয়েছিল। নির্বাচন উপলক্ষে তারা দেশে আসতে শুরু করেছে। আকুলসহ ৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। তাদের কাছ থেকে পাওয়া যাচ্ছে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য।
সূত্রের দাবি, অপরাধীরা স্পেন ও জার্মানির তৈরি আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করছে। ওই অস্ত্র ওজনে হালকা, গুলি করার সময় শব্দ ও ঝাঁকুনি কম এবং সহজেই লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। এ ধরনের পিস্তল সন্ত্রাসীর কাছ থেকে উদ্ধার হচ্ছে অহরহ। রাজনৈতিক ক্যাডার ও অপরাধীদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে ছোট আকারের অস্ত্র। বহন ও ব্যবহারে নিরাপদ বলেই তারা ক্ষুদ্রাস্ত্র ব্যবহারে বেশি আগ্রহী।এ বিষয়ে গোয়েন্দা বিভাগের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সম্প্রতি আটক হওয়া অস্ত্র কারবারীদের কাছ থেকে চাঞ্চল্যকর তথ্য উদঘাটন হয়েছে। তাদের মধ্যে আকুল হোসাইন যশোরের শার্শা এলাকার একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী। যারা এসব অস্ত্র কিনেছে তাদের একটি তালিকা পাওয়া গেছে। পুলিশ ওই অস্ত্রগুলোর সন্ধান করছে এবং ওই সব ক্রেতাদেরও খুঁজছে।
এদিকে, পুলিশের অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, অস্ত্রের চালানসহ আটক এই চক্রের সদস্যরা গত ৫ বছরে অন্তত দু’শতাধিক অস্ত্র বিক্রি করেছে বলে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে। বিশেষ করে লকডাউনের আগে তারা ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর অন্তত শতাধিক অস্ত্র বিক্রি করেছে বলে জানিয়েছে। অস্ত্র কেনার তালিকায় রয়েছেন যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটের ইউপি নির্বাচনে সম্ভাব্য কয়েকজন প্রার্থীর নাম। ঢাকা কেন্দ্রিকও তারা কিছু অস্ত্র বিক্রি করেছে বলে তদন্তে ওঠে এসেছে। ঢাকায় বিক্রি হওয়া অস্ত্রগুলো ডাকাতি ও চাঁদাবাজিতে ব্যবহার হচ্ছে। তবে এলাকাভিত্তিক বিক্রি হওয়া অস্ত্রগুলো সম্ভাব্য ইউপি নির্বাচনের প্রার্থীরা তাদের নিজেদের নিরাপত্তা ও এলাকায় প্রভাব বিস্তারের জন্য সংগ্রহ করেছেন বলে তদন্তে উঠে আসছে। এমন পরিস্থিতিতে ওইসব ক্রেতার ওপর নজরদারি চালানো হচ্ছে।