যশোর প্রতিনিধি: যশোরের কেশবপুর আনসার ভিডিপি ব্যংকে চলছে নান অনিয়ম অব্যবস্থাপনা। গ্রাহক হয়রানী, ভুয়া কাগজে ঋণ প্রদান অতিরিক্ত সুদ আদায়সহ নানা অভিযোগ উঠেছে ম্যানেজার আজগার আলীর বিরুদ্ধে। ৯৬ সালে দেশে আনসার ভিডিপি সদ্যদের কল্যাণে ব্যাংকটির যাত্রা শুরু হলেও তার নুন্যতম কোন সুবিধা পাচ্ছেন না তারা। অযাথা হয়রানির কারণে ৫০ শতাংশ গ্রাহক ওই ব্যাংকে লেনদেন বন্ধ করে দিয়েছেন। এব্যাপারে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেও প্রতিকার না পেয়ে আদালতে ওই ম্যানেজারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে ।যশোরের কেশবপুরে আনসার ভিডিপি ব্যাংকের যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৯ সালে। বর্তমানে ব্যাংকটির গ্রাহক সংখ্যা ৯ শতাধিক। আনসার ভিডিপি সদস্যদের ব্যাংকের সাথে সম্পৃক্ত করে তাদের সহজ শর্তে ঋন প্রদানের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা করার লক্ষ্যে ব্যাংকটির যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে এর চিত্র একবারেই ভিন্ন। বিশেষ করে বর্তমান ম্যানেজার আসার পর পরিস্থিতি আরো নাজুক হয়ে ওঠেছে।কেশবপুর উপজেলা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা সখিনা বেগম জানিয়েছেন, ম্যানেজারের আচার ব্যবহার খুবই খারাপ।তিনি আসার পর গরীব আনসার সদস্যরা ওই ব্যাংক থেকে নুন্যতম কোন সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন না। ৯ শতাংশ হারে সুদ নেওয়ার নিয়ম থাকলেও তিনি ১৫ শতাংশ হারে সুদ আদায় করেছে। যার কারণে ব্যাংকে বর্তমান ৯০ শতাংশ গ্রাহক ঋণ খেলাপি। সর্বশেষ করোনার মহামারির সময় সরকারে ৫ শতাংশ সুদে প্রণোদনা দেওয়ার ক্ষেত্রেও ব্যাপক নয় ছয়ের অভিযোগ উঠেছে ম্যানেজারের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশ ব্যাংকের শর্তানুযায়ী কোন খেলাপী সদস্যকে ঋন প্রদান করা যাবেনা। কিন্তু তিনি উৎকোচ নিয়ে ১০ থেকে ১৫ বছর খেলাপীদের ঋন প্রদান করেছেন। এপর্যন্ত প্রথম কিস্তির ১ কোটি ৬৫ লাখ এবং দ্বিতীয় কিস্তির ১ কোটি ২০ লাখ টাকা ঋন প্রদান করা হয়েছে। কেবলমাত্র আনসার বিডিপি সদস্যদের এই ঋন দেয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হয়নি। এমনকি বিক্রয় করা জমি এবং জাল কাগজ পত্রে ঋণ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের জিয়াউর রহমানকে জমির ভুয়া কাগজ এবং জাল দাখিলা নিয়ে ২ লাখ টাকা, কাস্তা গ্রামের আয়ুব হোসেনকে ২ লাখ টাকা, বাগদাহ গ্রামের রবিউল ইসলামকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ঋণ দিয়েছেন। এছাড়া বিক্রি করা জমির কাগজ পত্র নিয়ে পাচবাকাবর্শী গ্রামের রিয়াদ আরেফিন বাবুকে ২ লাখ টাকা এবং বায়সা গ্রামের শহিদুল ইসলামকে দেড় লাখ টাকা ঋণ দিয়েছেন। শহিদুল ইসলামের কাছ থেকে শ্রীরামপুর গ্রামের শাহাজন আলী ও আব্দুর রাজ্জাক ঋণ গ্রহনের অনেক আগেই শহিদুল ইসলামের কাছ থেকে ওই জমি ক্রয় করেন। আবার কাগজ পত্র জমা নিয়েও ঘুষ না দেয়ায় ঋন না দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে অনেকের। এমন অভিযোগ করেছেন উপজেলার বারুই হাটি গ্রামের রাবেয়া খাতুন, ধর্মপুর গ্রামের আফাজ উদ্দিন, চিংড়া গ্রামের মোস্তফা ও সাগরদাড়ী গ্রামের আলাউদ্দিন। তার বিরুদ্ধে ঘুষের বিনিময় বাংলাদেশ ব্যাংকের শর্ত ভেঙ্গে হাসানপুর গ্রামের ফারুক হোসেন নামে এক পাগলাকে ১ লাখ এবং রঘুরামপুর গ্রামের পঙ্গু আমিনুরকে ২ লাখ টাকা ঋণ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। তিনি যেসব খেলাপী গ্রাহকদের প্রণোদনার ঋণ দিয়েছেন তাদের মধ্যে রয়েছে মঙ্গল কোটের দীপংকর ও মোক্তার আলী, আলতাফোলের খোদেজা বেগম ও বালিয়াডাঙ্গার জামাল উদ্দিন।উর্ধতন কতৃপক্ষের কাছে এসব অভিযোগ কওে কোন প্রতিকার না পেয়ে সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে যশোর আমলী আদালতে মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী শাহাজান আলী নামে এক ব্যক্তি। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে পিবিআইয়ের ওপর তদন্ত দিয়েছেন। ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, ম্যানেজার আজগার আলীর খুটির জোর খুলনার রিজিওনাল ম্যানেজার জিএম হাফিজুর রহমান। তার যোগ সাজসে তিনি এসব অপকর্ম করছেন। যে কারণে তার কাছে একাধিক অভিযোগ দেয়া হলেও তিনি কোন পদক্ষেপ নেননি। নিরুপায় হয়ে গ্রাহকরা আদালতে মামলাসহ দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দিয়েছেন। এ ব্যপারে ব্যাংক ম্যানেজার আজগার আলী অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন তার সুনাম ক্ষুন্ন করার জন্য এসব অবান্তর কথা বলছেন।তবে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের কথা তিনি স্বীকার করেছেন। অভিযোগের ব্যাপারে রিজিওনাল ম্যানেজার জিএম হাফিজুর রহমানের সাথে যোগ করা হলে তিনি বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখবেন বলে জানান। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআইয়ের ওসি শেখ মোনায়েম হোসেন জানান, মামলার তদন্তাধীন রয়েছে।