যশোর প্রতিনিধি
যশোর বিসিক শিল্প নগরীর নিম্নমান সহকারী কাম টাইপিস্ট ধুরন্ধর আব্দুল কুদ্দুস, ওরেফে কুদ্দুসের দুর্নীতির কারনে ভাটা পড়েছে সেখানকার ব্যবস্য বাণিজ্য। কুদ্দুসের অনিয়ম দুর্নীতির কারনে টানা ২২ বছর বিসিকের সাধারণ ব্যবসায়ীরা অতিষ্ট হয়ে পড়েছে। আব্দুল কুদ্দুসের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির পাহাড় সমান অভিযোগ উঠলে স্হানীয় কর্মকর্তারা যেন মুখে কুলুপ দিয়েছেন। দুর্নীতিবাজ আব্দুল কুদ্দুসের বিরুদ্ধে ব্যবস্হা।গ্রহনের জোড় দাবি জানিয়েছেন, বিসিক শিল্পনগরীর সাধারন ব্যবসায়ীরা।
এক লিখিত অভিযোগ ও বিভিন্ন সুত্র থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ব্যাপক অনুসন্ধানে থেকে জানা গেলো বিসিক শিল্প নগরীর আব্দুল কুদ্দুসের অনিয়ম দুর্নীতির সেচ্ছাচারিত দুর্নীতির ঘটনা। কুদ্দুস পাল্টি দিয়ে তিনি কখনও হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা, কখনো ভারপ্রাপ্ত ডিজিএম পরিচয় দিয়ে জাহির করে সমগ্র বিসিক শিল্প নগরীতে মহাধুমে লুটপাট চালাচ্ছে। বিষয়টি বিসিকের প্রধান কার্যালয় পর্যন্ত গোড়ালে, কোন এক বড় ভাইয়ের হাতের ইশারায় তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগ বা একাধিক মাধ্যম গুলো বলেছে, যশোর ঐতিহ্যবাহি ঝুমঝুমপুর বিসিক শিল্প নগরীতে যখন কোন ডিজিএম, কর্মকর্তা বা অন্য কোন কর্মকর্তা বদলী হয়ে আসেন তখন নিম্নমান ক্লার্ক কাম টাইপিস্ট আব্দুল কুদ্দুস বিসিকের প্রধান কার্যালয়ে তার সম্পর্কে উল্টা পাল্টা বানোয়াট অভিযোগ করে তাকে হেনস্হা করে তোলে। এরপর তাকে দিয়ে সকল প্রকার অনিয়মের স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেন। এছাড়া আব্দুল কুদ্দুসের সকল অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি তারা মুখ বুঝে সহ্য করেন। ১৯৯৯সালে বিসিকের নিম্নমান ক্লার্ক কাম টাইপিস্ট হয়ে যোগদান করেন যশোরে আসে আব্দুল কুদ্দুস। সেই থেকে সে বিগত ২২ বছর ধরে একই জায়গায় আকড়ে ধরে আছেন। দীর্ঘ ২২ বছর থেকে একই জায়গায় তিনি চাকুরি করছেন। তিনি গত ২০ বছর ধরে হিসাব রক্ষকের কোয়ার্টারে মাত্র ৫শ টাকা দিয়ে ঘর নিয়ে অবৈধভাবে বাস করে আসছিলেন। এরপর তিনি বিসিকের অফিসারের বরাদ্দকৃত ১০ কাঠা জমির নির্মিত ৬ রুমের বাংলোয় বিনা ভাড়ায় থাকেন। এই বাসা অবস্থানরত অফিসারের বেতন থেকে প্রতি মাসে ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা বাসাভাড়া বাবদ কর্তন করা হতো। বাসায় অর্ধেক জ্বালানি কাঠ ব্যবসায়ী রাজুর কাছে বিক্রি করে দিচ্ছে। যার মূল্য প্রায় ৫ হাজার টাকা। বিসিকের মধ্যে ৫টি বড় আম গাছ পড়ে গেলে সুচতুর আব্দুল কুদ্দুস নামমাত্র মূল্য দেখিয়ে রাজুর কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। যার ডাল সে ইতোপূর্বে বিক্রি করেছেন। বিসিকের রেস্ট হাউজের একটি বড় খাট, জাজিম, মশারী, আলনা, জুতার র্যাক, ডাইনিং সেট, ৫টি বসার চেয়ার, ৩টি সিলিং ফ্যানসহ অনেক ফ্যামিলি আসবাবপত্র গত ৮ বছর যাবত নিজে ব্যক্তিগতভাবে বাসায় ব্যবহার করছেন। এগুলো এখন তার ব্যক্তিগত সম্পত্তি হয়ে গেছে। তার বাসার পিছনে একটি ছাগল ও একটি হাসের খামারও অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, বিসিকের হিসাব বিভাগের কোন লোক যাতে না আসেন তারজন্য ঢাকার হেড অফিসে প্রয়োজনীয় কাজ করে রেখেছেন আব্দুল কুদ্দুস। যার কারণে এ বিভাগে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। সব জায়গায় তিনি বিসিকের হিসাব রক্ষক বলে জাহির করছেন। হিসাব ঠিকমত না বোঝার কারণে শিল্পনগরীর পার্টির ভুলভাল হিসাব ধরিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
জানা গেছে, আবুল কালামের বিসিকের কাঠ পট্টির কেবি টিম্বর সম্পূর্ণ ভাড়া নিয়ে সেখানে ভাত ও রুটির হোটেল তৈরি করেছেন। যা পরিচালনা করছেন তার বোনজামাই কমল। এছাড়া শিল্পনগরীর মধ্যে ড্রেনের উপর ও কারখানার মধ্যে ছোট বড় মিলিয়ে ৫০টি অবৈধ দোকানপাট আছে। এসব দোকানদাররা তাকে প্রতিমাসে ভাড়া দিতে হয়। যা থেকে প্রতিমাসে ১০হাজার টাকা আয় হয়। যা কুদ্দুস নিজেই গ্রহণ করে আত্মসাত করছেন।
স্থানীয়রা জানান, বিসিকের অনুমতি ছাড়া কারখানার মধ্যে ফ্যামিলি ভাড়া দেয়া হয়েছে।তাদের কাছ থেকে তিনি ভাড়া আদায় করেন। কারখানার মধ্যে মালিকদের ফ্যামিলি থাকা অনুমতি না থাকলেও কুদ্দুসের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে আল্লারদান বেকারী, রিয়াজ এগ্রোনিটিং কারখানা, এম ইউসি ফুড, তোবারেক ঢালাই মিল, শান্তি বোর্ড শিল, তুলি রবিন মিল, মায়া ফুড মিল, মজিবর ববিন মিলে ফ্যামিলি থাকছে। তাদের কাছ থেকে বেআইনী ভাবে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয়।
জানা গেছে, বিসিক অফিসের উত্তর পাশে ৫টি বড় সেগুন গাছ ও ৩টি মেহগনি গাছ বিক্রির জন্য খুলনা বিভাগীয় অফিস থেকে নামমাত্র দুই লাখ টাকায় বিক্রির অনুমোদন করে এনে সর্বো নিম্ন ৬ লাখ টাকা করে গাছ গুলো বিক্রি করেছেন।
কয়েকজন কারখানার মালিক জানান, বিসিকের মধ্যে অনেক কারখানা চালু নেই। সেগুলো খুঁজে বের করে তাদেরকে অফিসিয়াল ভাবে কুদ্দস চিঠি দেন। এরপর তারা অফিসে আসলে মোটা অংকের টাকা নিয়ে তাদেরকে সেই চিঠি গোপনে বা ধামাচাপা দিয়ে থাকে।
তারা আরো জানান, বর্তমানে বিসিকে বেশ অনেকগুলি প্লট ও কারখানা বিক্রি হয়েছে এবং আরো ৫টি বিক্রির আদেশনামা রয়েছে।এসব প্লটগুলো বিক্রির সময় প্রত্যেক মালিককে তাকে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা করে দিতে হয়েছে। তা না হলে তিনি ফাইল পত্রের মধ্যে অথবা খুলনা বিভাগীয় অফিসে বিভিন্ন অজুহাত বা ঝামেলা দেখিয়ে ফাইল আটকিয়ে দেয়। তাকে যারা টাকা দেয় তাদেরকে কোন ঝামেলা ছাড়া কাজ হয়। এবিষয়ে নতুন প্লট ক্রয়কারী কয়েকজন মালিকরা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
টাইপিস্ট আব্দুল কুদ্দুস সম্প্রতি বড় টেইনার (প্রশিক্ষক) হিসেবে আর্বিভাব ঘটেছে।শিল্প উদ্যোক্তাদের তিনি প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন বলে কয়েক উদ্যোক্তা জানিয়েছেন। জানা গেছে, হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা পরিচয়ে শিল্প উদ্যোক্তাকে হিসাব বিভাগের ক্লাস নেন। ক্লাশ নেয়ার জন্য প্রতিটি ক্লাশবাবদ ১ হাজার টাকা নিচ্ছেন। কিন্তু বিসিকের সূত্র গুলো বলছে, বিসিকের কোন কর্মকর্তা ক্লাশ নিলে তাকে কোন টাকা দেয়া হবে না। অতিথি শিক্ষকদের এ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।
আব্দুল কুদ্দুস,বিসিকের রেস্ট হাউজ দেখা শোনা করেন। তার কাছে রেস্টহাউজের সকল চাবি থাকে। রেস্ট হাউজে কোন রুম খালি থাকলে সেখানে বহিরাগত মেয়েদের দিয়ে অনৈতক কাজ করে থাকেন। মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গার কয়েকজন রেগুলার লোক আছে। যারা নিয়মিত ওই রেস্ট হাউজে থাকেন। তাদের প্রত্যেকের সাথে নারী থাকে। করোনার সময় সকল আবাসিক হোটেল বন্ধ থাকলেও কুদ্দুস ওই রেস্ট হাউজে নারী পুরুষদের দিয়ে অনৈতিক ব্যবসা চালিয়েছে। যা রেস্ট হাউজের আশেপাশে লোকজন জানেন। কিন্তু কেউই মুখ খোলেন না। এতোসব কিছু করে আব্দুল কুদ্দুস রয়েছেন বহাল তবিয়তে। অচিরেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্হা গ্রহনের দাবি তুলেছেন ভুক্তভোগী মহল। কুদ্দুসের বিরুদ্ধে এসব অপকর্মের বিষয়ে জানতে চাইলে যশোর শিল্পনগরীর কর্মকর্তা মেহেদি হাসান বলেন , আমি নতুন এসেছি, তার বিরুদ্ধে কিছু জানা নেই যদি কেউ অভিযোগ দেয় তাহলে তদন্ত পুর্বক ব্যবস্হা নেয়া হবে। জানতে মুটো ফোনে যশোর বিসিকের ডিজিএম ফরিদা ইয়াসমিন সাংবাদিকেদর বলেন, যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান,অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্হা গ্রহন।করা হবে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে, আব্দুল কুদ্দুস সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। তার বিরুদ্ধে কেউ মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করেছেন।তিনি সুনামের সাথে চাকুরী করছেন বলে সাংবাদিকদের কাছে জানান।