মাধঘোপা নিউজ ডেক্স: রাজশাহী ও খুলনাসহ দেশের পাঁচ জেলার হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। রবিবার সকাল আটটা থেকে সোমবার সকাল আটটা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় তাদের মৃত্যু হয়েছে।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে রাজশাহী মেডিকেলের করোনা ইউনিটে। সেখানে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া একই সময়ে খুলনায় ৮জন, বরিশালে ৪ জন, চট্টগ্রামে চারজন এবং টাঙ্গাইলে একজনের মৃত্যু হয়েছে। ঢাকাটাইমসের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর।
রাজশাহী: রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে করোনা ইউনিটে ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। রবিবার সকাল ৮টা থেকে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে তারা মারা যান।
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, মৃত ১৩ জনের মধ্যে ছয়জন করোনা পজিটিভ ছিলেন। আর ছয়জন ভর্তি ছিলেন করোনার উপসর্গ নিয়ে। এছাড়া একজন করেনা নেগেটিভ হলেও তিনি শ্বাসকষ্টে মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে রাজশাহীর তিনজন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ছয়জন, নাটোরের তিনজন এবং নওগাঁর একজন রয়েছেন।
এ নিয়ে চলতি মাসের গত ২১ দিনে (১ জুন সকাল ৮টা থেকে ২১ জুন সকাল ৮টা পর্যন্ত) এ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মারা গেছেন ২১৬ জন। শামীম ইয়াজদানী জানান, গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৬২ জন। সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত হাসপাতালটির করোনা ইউনিটে ভর্তি আছেন ৪০২ জন। আগের দিন ভর্তি ছিলেন ৩৭৭ জন। হাসপাতালে করোনা ডেডিকেটেড শয্যার সংখ্যা ৩০৯টি।
খুলনা: সোমবার সকাল আটটা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় খুলনায় আটজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে চারজন খুলনার করোনা হাসপাতালে এবং বাকি চারজন বেসরকারি গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকে মৃত্যুবরণ করেন। এর আগে রবিবার সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড ছিল ২৮ জনের।
খুলনা করোনা হাসপাতালের ফোকাল পার্সন ও খুমেক হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার ও গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. গাজী মিজান আটজনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছেন।
তারা জানান, খুলনার করোনা হাসপাতালে চারজন এবং বাকি চারজন বেসরকারি গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন। নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩২ জন ও সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২৩ জন। আর নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) রয়েছেন ২০ জন। সোমবার সকাল পর্যন্ত খুলনার ১৩০ শয্যার করোনা হাসপাতালে ১৬১ জন চিকিৎসাধীন।
চট্টগ্রাম: গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ৯৯২টি নমুনা পরীক্ষায় নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৯০ জনের। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত ৫৬ হাজার ১৭১ জন। এইদিন করোনায় ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সোমবার সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, এইদিন কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাব ও চট্টগ্রামে ১০টি ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা হয়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবে ১৫৮টি নমুনা পরীক্ষা করে ৪৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) ২০১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে শনাক্ত হয় ২১ জন। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) ল্যাবে ৮৪টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৭ জন এবং চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু) ল্যাবে ১১৭টি নমুনা পরীক্ষা করে ২২ জনের করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে।
এছাড়া ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল ল্যাব ৭৯টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৯ জন, শেভরণ ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরিতে ২১৩টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৭ জন, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল ল্যাবে ১৬টি নমুনা পরীক্ষা করে ৯ জন, জেনারেল হাসপাতালের রিজিওনাল টিবি রেফারেল ল্যাবরেটরিতে (আরটিআরএল) ৪৮টি নমুনা পরীক্ষা করে ২৫ জন, চট্টগ্রাম মেডিকেল সেন্টার ল্যাবে ১৯টি নমুনা পরীক্ষা করে ৬ জন, এপিক হেলথ কেয়ার ল্যাব ১৩টি নমুনা পরীক্ষা করে ৪ জনের শরীরের করোনা পজেটিভ পাওয়া গেছে।
অন্যদিকে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবে চট্টগ্রামের ৪৪টি নমুনা পরীক্ষা করে একজনের শরীরে করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব মিলেছে। এদিন পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোনো নমুনা পরীক্ষা করা হয়নি।
সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ৯৯২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে আক্রান্ত হয়েছেন ১৯০ জন। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে নগরে ১২৮ জন এবং উপজেলায় ৬২ জন।
বরিশাল: বরিশাল বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে আরও চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এই সময়ে ১১৭ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে বিভাগে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৬ হাজার ৩৯৭ জনে।
মৃত চারজনের মধ্যে বরগুনা ও ঝালকাঠিতে দু’জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে এবং বাকি দু’জন শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। এ নিয়ে বিভাগে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ২৯৫ জন বলে জানিয়েছে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ও শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের দপ্তর।
টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলে গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। ৩৮৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৬৫ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার সকালে টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা. আবুল ফজল মো. সাহাবুদ্দিন এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন।
নতুন আক্রান্তদের মধ্যে সদর উপজেলায় ৮৬ জন, দেলদুয়ারে নয় জন, সখীপুর ও ঘাটাইলে তিনজন করে, বাসাইলে দুই জন, কালিহাতীতে ২০ জন, মির্জাপুর ও নাগরপুরে ছয় জন করে, গোপালপুরে ১২ জন, ভুঞাপুরে ১৭ জন ও মধুপুরে এক জন রয়েছে।
ডা. আবুল ফজল মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘জেলায় শনাক্তের হার ৪২ দশমিক ৮৫ শতাংশ। জেলায় মোট করোনা রোগী ৬ হাজার ২৭৪ জন। মোট সুস্থ হয়েছন ৪ চার ৩৯৮ জন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মোট মৃত্যু হয়েছে ৯৯জনের।’
তিনি আরও বলেন, গত একমাস ধরে জেলায় করোনাভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে গেছে। এজন্য আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে টাঙ্গাইল পৌরসভা ও এলেঙ্গা পৌরসভা এলাকায় কঠোর বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। যা আগামী ২৮ জুন পর্যন্ত চলবে। এক সপ্তাহ পরে করোনা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির মাধ্যমে আবার বৈঠক করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’