মাধঘোপা নিউজ ডেক্স: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের উন্নয়নে যে পদক্ষেপেই নেয়া হোক না কেন, সুন্দরবন এবং এর জীব বৈচিত্র্য যেন কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। বর্তমান সরকার সুন্দরবন ও এর জীব বৈচিত্র্য রক্ষার বিষয়ে সব সময় আন্তরিক বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বুধবার জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে সংরক্ষিত আসনের বেগম সুলতানা নাদিরার প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ তথ্য জানান।
এসময় সরকারপ্রধান আরও জানান, সুন্দরবনের আয়তন বাড়ানোর জন্য সরকার কৃত্রিম ম্যানগ্রোভ সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছে। সমগ্র উপকূলীয় অঞ্চলে এর বিস্তৃতি ঘটানোর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। একই সাথে সুন্দরবনের বৃক্ষাদি এবং বন্যপ্রাণী রক্ষার জন্য তথা বন অপরাধ দমনের জন্য স্মার্ট পেট্রোলিংসহ নানাবিধ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের মাধ্যমে ২০১৫ সালে বাঘ শুমারি অনুযায়ী সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ছিল ১০৬টি। ২০১৮ সালের শুমারিতে এর সংখ্যা ১১৪টি পাওয়া গেছে। সুন্দরবনের কার্বন মজুদের পরিমাণ ২০০৯ সালের ১০৬ মিলিয়ন টন থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৯ সালে ১৩৯ মিলিয়ন টন হয়েছে।
তিনি জানান, জীব বৈচিত্র্যের আধার সুন্দরবনে এখন ৩৩৪ প্রজাতির উদ্ভিদ, ১৬৫ প্রজাতির শৈবাল, ১৩ প্রজাতির অর্কিড এবং ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণী রয়েছে। বন্যপ্রাণীর মধ্যে ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ, ৮ প্রজাতির উভচর, ৩১৫ প্রজাতির পাখি, ২১০ প্রজাতির মাছ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি ও ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া আছে।
সুন্দরবনের গাছপালা ও বন্যপ্রাণীকূলকে রক্ষার জন্য বনকর্মীদের যুগোপযোগী করে তুলে এদের সংখ্যা বৃদ্ধির পদক্ষেপের কথাও জানান সরকারপ্রধান।
২০১৭ সালে বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য এলাকা সম্প্রসারণ করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমানে সুন্দরবনের প্রায় ৫৩% এলাকা অভয়ারণ্যের অন্তর্ভুক্ত।
মাছ উৎপাদন ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি
সরকারদলীয় সাংসদ সহিদুজ্জামানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, সরকার দেশের মংস্য সম্পদ রক্ষা ও উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কার্যকর ও ফলপ্রসূ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তাই গত ১১ বছরে মাছ উৎপাদন ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। জাতিসংঘের ২০২০ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী স্বাদু পানির মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্থানে। এখন আমরা মাছ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বর্তমানে দৈনিক ৬০ গ্রামে চাহিদার বিপরীতে ৬২ দশমিক ৫৮ গ্রাম মাছ গ্রহণ করছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধির জন্য ২০০০ সালে ৬৯৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা রিজার্ভ হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে এবং তা সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এছাড়াও ইকোফিশ প্রকল্পের সহায়তায় নিঝুমদ্বীপ সংলগ্ন এলাকায় ৩ হাজার ১৮৮ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা এমপিএ হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে মা ইলিশ ধরা নিষিদ্ধের সময়ে ৫১ দশমিক ২ ভাগ ডিম দেয়ার সুযোগ পেয়েছে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ইলিশ উৎপাদন ছিল ২ লাখ ৯৯ হাজার মে.টন। আর ২০১৯-২০ অর্থবছরে উৎপাদন ৫ লাখ ৫০ হাজার মে.টন।