মাধঘোপা নিউজ ডেক্স: পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের জন্য প্রায়ই বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে দেরি হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিবেশ অধিদপ্তরকে দ্রুত ছাড়পত্র দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি ছাড়পত্র দিতে দেরি হলে চুপ থাকাকে সম্মতির লক্ষণ ধরে নিয়ে কাজ এগিয়ে নেয়ার তাগিদ দিয়েছেন সরকাপ্রধান।
মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশনা দেন। বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের এ ব্যাপারে ব্রিফ করেন।
প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে সংযুক্ত হয়ে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় সভাপতিত্ব করেন।
আজকের একনেক সভায় ৬৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘কুষ্টিয়া-মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ আঞ্চলিক মহাসড়কটি কুষ্টিয়া হতে মেহেরপুর পর্যন্ত যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ’ শিরোনামের প্রকল্পটি অনুমোদনের সময় পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র পেতে দেরি হওয়ার বিষয়টি উঠে আসে।
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ছাড়পত্র দিতে হবে পরিবেশ অধিদপ্তরকে। ওই সময়ে না দিলে মৌনতা সম্মতির লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হবে। তখন ছাড়পত্র ছাড়াই প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করতে পারবে। অনির্দিষ্টকালের জন্য তো আর বসে থাকা যাবে না। কোনো কাজ ফেলে রাখার সুযোগ নেই। চুপচাপ বসে থাকবেন সে সুযোগ নেই। তাই দ্রুত ছাড়পত্র দিতে হবে।’
প্রকল্প শুরু হওয়ার পর পরিবেশ মন্ত্রণালয় থেকে কোনো আপত্তি এলে সে ক্ষেত্রে কী হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী আবদুল মান্নান বলেন, ‘পরিবেশ সরকারের অংশ, যারা প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে তারাও সরকারের অংশ। কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নকালে যদি এমন কোনো সমস্যা দেখা যায়, সত্যিই সেটি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর, এক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে তখনও যদি কোনো আপত্তি আসে, তা অবশ্যই বিবেচনা করা হবে। নিশ্চয়ই আমরা প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে এমন কোনো কিছু করবো না, যা পরিবেশের ক্ষতি হয়।’
কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে নদীর সঙ্গে সংযুক্ত খালগুলো যেন বন্ধ না হয়, প্রধানমন্ত্রী সেগুলোর দিকে নজর দিতে বলেছেন বলে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘নদী বড় নদীতে পানি প্রবেশ ও বের হওয়ার যে খালগুলো রয়েছে, এগুলো যেন বন্ধ না হয়, প্রধানমন্ত্রী সেই নির্দেশনা দিয়েছেন। নদী এলাকায় কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নকালে সাবধানতা অবলম্বন করার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।’
একনেকে ৯ প্রকল্পের অনুমোদন
এদিকে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) প্রায় পাঁচ হাজার ২৩৯ কোটি ৬২ লাখ টাকা ব্যয়ের নয়টি প্রকল্প অনুমোদন করেছে। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন পাঁচ হাজার চার কোটি ৩৯ লাখ এবং বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ ২৪৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকা।
অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হলো, ৬৪৩ কোটি দুই লাখ টাকা ব্যয়ে ‘কুষ্টিয়া (ত্রিমোহনী)-মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ (আর-৭৪৫) আঞ্চলিক মহাসড়কটির কুষ্টিয়া থেকে মেহেরপুর পর্যন্ত যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ’ প্রকল্প; ২৩৭ কোটি ২১ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-এর নবসৃজিত নারায়ণগঞ্জ (৬২ বিজিবি) ব্যাটালিয়নের অবকাঠামোগত বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ’ প্রকল্প; ২১৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাকাশ অবলোকন কেন্দ্র’ প্রকল্প; ৮১ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘বাংলাদেশ ইকোনমিক জোনস ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (তৃতীয় সংশোধিত)’ প্রকল্প; ৮৮ কোটি ছয় লাখ টাকা ব্যয়ে ‘বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ’ প্রকল্প; ৩৪৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘দরিদ্র মহিলাদের জন্য সমন্বিত পল্লী কর্মসংস্থান সহায়তা প্রকল্প-দ্বিতীয় পর্যায় (ইরেসপো-দ্বিতীয় পর্যায়)’ প্রকল্প; তিন হাজার ৮৯ কোটি ৯৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি ও কমলনগর উপজেলাধীন বড়খেরী ও লুধুয়াবাজার এবং কাদের পণ্ডিতের হাট এলাকা ভাঙন থেকে রক্ষাকল্পে মেঘনা নদীর তীর সংরক্ষণ’ প্রকল্প; ২৩২ কোটি ২৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘মাতারবাড়ী আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ারড পাওয়ার প্রকল্প (পিজিসিবি) অংশ: মাতারবাড়ী-মদুনাঘাট ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন (প্রথম সংশোধিত)’ প্রকল্প এবং ৩০৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘উপজেলা পর্যায়ে মহিলাদের জন্য আয়বর্ধক (আইজিএ) প্রশিক্ষণ (দ্বিতীয় সংশোধিত)’ প্রকল্প।