মাধঘোপা নিউজ ডেক্স: স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের বিরোধিতা করে আন্দোলনে নামে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ। সেসময় বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ছাত্র অধিকারসহ বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের ৫৪ নেতাকর্মী।
তাদের মুক্তির দাবিতে সোমবার (৩১ মে) প্রধান বিচারপতিকে স্মারকলিপি দিতে সুপ্রিম কোর্টে গেছেন ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরসহ ছাত্র অধিকার ও যুব অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা।
তাদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে সেখানে গেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকিও।
ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর জানান, দুপুর সোয়া ১টার দিকে তারা সুপ্রিম কোর্টের মাজার ফটকে পৌঁছান। স্মারকলিপি নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে গেলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। একপর্যায়ে ফটক বন্ধ করে দেয়া হয়। পরে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকীকে সুপ্রিম কোর্টে প্রবেশ করতে দেয়া হয়। তারা রেজিস্ট্রারের সাথে সাক্ষাৎ করেন। এসময় গ্রেপ্তারকৃত নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবি জানান।
জানা গেছে, মোদিবিরোধী আন্দোলনে বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে রাজধানীর শাহবাগ থানায় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগ পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করে।
এর আগে সোমবার (৩১ মে) দুপুরে শাহাবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘গ্রেপ্তার ৫৪ জন ছাত্রের অবিলম্বে মুক্তির দাবিতে-উদ্বিগ্ন অভিবাভক এবং নাগরিকের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠিত সমাবেশ থেকে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার জানান গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি এবং প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ছাত্ররা দিনের আলো সবচেয়ে আগে দেখতে পান। তাই যখন নরেন্দ্র মোদী এ দেশে এসেছিল ছাত্ররা তার প্রতিবাদ করেছিল। তারা সঠিক কাজটিই করেছে। তাদের দায়িত্ব পালন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বুঝতে পারছেন না তিনি কি ভুল করছেন। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জাতিকে একত্রিতভাবে উন্নয়নের পথে আসতে। প্রধানমন্ত্রী আপনাকে আমি কতবার বলেছি সবাইকে একসঙ্গে ডাকেন। আপনি ডাকেননি, কারণ আপনি আমাদেরকে ভয় পান। আপনি আমাদের না, সত্যকে ভয় পান। আহ্বান যেহেতু করেছেন, এবার সেটা কার্যকর করে দেখান। সকল বিরোধী দলকে ডাকেন।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, মঙ্গলবার থেকে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিন। একটা জাতিকে ধ্বংস করতে হলে তার শিক্ষাকে ধ্বংস করতে হয়। প্রয়োজন হলে স্কুল-কলেজে ২-৩ শিফ্ট চালু করতে হবে। এটা না করলে জাতি ধ্বংস হয়ে যাবে, জাতি সিকিমে পরিণত হবে। তার জন্য দায়ী হবেন আপনি।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, ঐক্যের শক্তির প্রমাণ হচ্ছে রোজিনা ইসলাম। আমাদের দেশের প্রতিটা সংগঠনকে দ্বিধা বিভক্ত করা হয়েছে, আওয়ামীপন্থী, বিএনপিপন্থী না হয় করিম এবং রহিমপন্থী। রোজিনা ইসলামের ঘটনায় সাংবাদিকরা এই প্রথম দেখিয়েছে তারা সবাই একপন্থী। চারিদিকে যখন একত্রে আওয়াজ উঠেছে, রোজিনা ইসলামকে তারা ৭ দিনও আটকে রাখতে পারেনি।
সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, কল্যাণ পাটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম, গণফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া, রাষ্ট্র চিন্তার সদস্য রাহুল রাহা, গণফোরামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ, মুক্তিযোদ্ধা সাদেক খান, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজার রহমান ইরান, ভাসানী অনুসারী পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীর, মুক্তিযোদ্ধা ইসতিয়াক আজিজ উলফাত, ডাকসুর ভিপি নূরল হক নূর প্রমুখ। এছাড়াও সমাবেশে বক্তব্য দেন গ্রেপ্তারকৃত ছাত্রদের নেতা ও অভিভাবকরা। সমাবেশ পরিচালনা করেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের কেন্দ্রীয় সদস্য জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু।