মাধঘোপা নিউজ ডেক্স: সম্প্রতি ভারতে বেঙ্গালুরুতে এক তরুণীকে বিবস্ত্র করে পৈশাচিক নির্যাতনের ভিডিও ভাইরালের সূত্র ধরে আলোচনায় আসেন রিফাদুল ইসলাম ওরফে টিকটক হৃদয় বাবু। তার সঙ্গে নির্যাতনকারী দুই তরুণীসহ আরও কয়েকজন যুবক জড়িত ছিল। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, ভুক্তভোগী তরুণী ও নির্যাতনকারী সকলেই বাংলাদেশি। তার মধ্যে অন্যতম হোতা টিকটক হৃদয় বাবু ও তার সহযোগীরা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এবং ভারতের কয়েকটি রাজ্যের কিছু অপরাধীর সঙ্গে মিলে মানবপাচারের আন্তর্জাতিক চক্র গড়ে তুলেছিলেন। যে চক্রটির যোগাযোগ মধ্যপ্রাচ্য পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ। এ চক্রের সদস্যরা সাধারণত লেখাপড়ায় অমনোযোগী স্কুল-কলেজ পড়ুয়া বখে যাওয়া সুন্দরী মেয়েদের টার্গেট করত। এছাড়াও স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না কিংবা উচ্ছৃঙ্খল তরুণীরাও চক্রটির টার্গেট ছিল।
শনিবার (২৯ মে) বিকেলে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. শহীদুল্লাহ তার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, রিফাদুল ইসলাম ওরফে টিকটক হৃদয় বাবু বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এবং ভারতের কয়েকটি রাজ্যের কিছু অপরাধীর সঙ্গে মিলে মানবপাচারের আন্তর্জাতিক চক্র গড়ে তুলেছিলেন। তরুণীদের ফাঁদে ফেলতে ফেসবুকে একটি গ্রুপ খুলেছিল এ চক্রটি। আন্তর্জাতিক মানব পাচারকারী চক্রের সদস্যরাই গ্রুপটি পরিচালনা করে থাকে।
সেখানে একজন অ্যাডমিন হিসেবে রয়েছেন- এই টিকটক হৃদয় বাবু। এ ফেসবুক গ্রুপে টিকটক ভিডিও তৈরির প্রলোভন দেখিয়ে মেয়েদের আকৃষ্ট করতো তারা। এ গ্রুপের মাধ্যমে গত বছরের শেষ দিকে ঢাকার পাশের একটি জেলার রিসোর্টে ৭০০ থেকে ৮০০ তরুণ-তরুণীকে নিয়ে ‘পুল পার্টির’ আয়োজন করা হয়েছিল। ওই পার্টি আয়োজনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন রিফাদুল। এ ফেসবুক গ্রুপে সুনির্দিষ্ট কিছু সদস্য আছেন, যারা গ্রুপের নারী সদস্যদের ভারতের বিভিন্ন মার্কেট, সুপারশপ, বিউটি পারলারে ভালো বেতনে চাকরির প্রলোভন দিয়ে পাচার করে আসছিলেন। চক্রের মূল আস্তানা ভারতের বেঙ্গালুরুর আনন্দপুর এলাকায়। চক্রটির ভারতের কয়েকটি রাজ্যের কিছু হোটেলের সঙ্গে চুক্তি রয়েছে। সেই হোটেলগুলোতে চাহিদামতো বিভিন্ন বয়সের মেয়েদের পাঠিয়ে দেওয়া হতো।
ডিসি শহীদুল্লাহ আরও বলেন, ভারতে পাচার হওয়া মেয়েদের আনন্দপুরে নিয়ে যাওয়ার পর কৌশলে নেশাজাতীয় কিছু বা মাদকদ্রব্য সেবন করিয়ে বা জোরপূর্বক বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করা হয়। পরে এসব নারীকে সব সময় হুমকি দেওয়া হয়- অবাধ্য হলে বা পালানোর চেষ্টা করলে এ ভিডিও তাদের পরিবার এমনকি স্বামীসহ অন্য স্বজনদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপ-কমিশনার (ডিসি) শহীদুল্লাহ বলেন, ‘ওই তরুণীকে নির্যাতনকারী সবাই আন্তর্জাতিক নারী পাচার গ্রুপের সদস্য বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। পুলিশ সদর দপ্তরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি) মাধ্যমে আসামিদের দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।’
সম্প্রতি কয়েকজন মিলে এক বাংলাদেশি তরুণীকে বিবস্ত্র করে যৌন নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এ ঘটনায় প্রথমে ভারতে এবং পরে বাংলাদেশেও ফেসবুকে ঘৃণা প্রকাশ করেন অনেকে। ওই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পরই নির্যাতনকারীদের ধরতে ভারত ও বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো তৎপরতা শুরু করে। প্রথম পদক্ষেপ নেয় ভারতের আসাম পুলিশ। ওই ভিডিও থেকে ৫ নির্যাতনকারীর ছবি প্রকাশ করে তাদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য টুইটারে পুরস্কারের ঘোষণা দেয় তারা। ভিডিওটি বেঙ্গালুরুর একটি মোবাইল থেকে ছড়িয়ে পড়েছে বলে নিশ্চিত হওয়ার পর সেখানকার পুলিও তৎপর হয়। এক পর্যায়ে গত বৃহস্পতিবার (২৭ মে) বেঙ্গালুরু শহরের একটি ভাড়া বাসা থেকে ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এর আগেই বাংলাদেশ পুলিশ নির্যাতনকারীদের একজন হিসেবে রিফাদুল ওরফে টিকটক হৃদয়কে শনাক্ত করে। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নির্যাতনের শিকার মেয়েটির পরিবারের সন্ধান পায় পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতেই রিফাদুলসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৪ জনকে আসামি করে হাতিরঝিল থানায় মামলা করেন মেয়েটির বাবা। রাজধানী ঢাকার মগবাজারের ফুটপাতে শরবত বিক্রেতা ওই বাবা জানান, মগবাজার এলাকার বাসিন্দা ‘টিকটক হৃদয়’ মধ্যপ্রাচ্যে পাঠানোর কথা বলে তার মেয়েকে বছর খানেক আগে ভারতে নিয়ে গেছেন। এই হৃদয় মূলত ওই তরুণীর স্বামীর বন্ধু।