যশোর প্রতিনিধি: শামীম আহমেদ মনা। ৪ সদস্যের সংসার তার। শিশুদের পোশাক তৈরি করে বিক্রির উপার্জিত টাকায় সংসার চলতো। বাড়িতে মেশিনে গভীর রাত পর্যন্ত শিশুদের ঘটি প্যান্ট, জামা, ফতুয়া তৈরি পর সেগুলো বিক্রির জন্য খুব সকালে বেরিয়ে পড়তেন তিনি। বেচাবিক্রিও ভালো ছিলো। একদিনেৃ তিন হাজার টাকা পর্যন্ত পোশাক বিক্রি করেছেন। কিন্তু কোভিড-১৯ নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় দেশ টানা লকডাউনের মুখে পড়ে। আর লকডাউনে কর্মহীন হয়ে পড়েন শামীম আহমেদ রনি। সংসারে অভাব দেখা দেওয়ায় রীতিমতো হতাশ হন। তাই পেশা পাল্টে মাস্ক বিক্রিতে নেমে পড়েন। কোনদিন ১ হাজার, কোনদিন ১২শ’ আবার কোনদিন ১৩শ’ টাকার মাস্ক বিক্রি হয় তার। ক্রেতাদের নজরে আসার জন্য শামীম আহমেদ রনি জাতীয় পতাকার ডিজাইনের পিপিই গায়ে দিয়ে তিনি মাস্ক হাতে ছুটে বেড়ান রাস্তায়। প্রায় তার দেখা মেলে শহরের প্রাণকেন্দ্র দড়াটানা ব্রিজের ওপর।
শামীম আহমেদ মনা জানান, তার পৈত্রিক ভিটা হলো খুলনার সোনাডাঙ্গা থানার বানরগাতি গ্রামে। ৩০ বছর আগে তার পিতা স্ব পরিবারে চলে আসেন যশোর শহরতলী বকচর এলাকায়। ৪ ভাইয়ের মধ্যে তিনি হলেন ৩ নম্বর। তার ভাইয়েরা থাকেন ঢাকায়। তাদের মধ্যে কেউ পোশাক শ্রমিক আবার কেউ মোটর শ্রমিক। জন্ম থেকে মনা বকচর হুশতলায় বসবাস করেন। তার সংসারে রয়েছে বৃদ্ধা মা সুফিয়া বেগম, স্ত্রী ইয়াসমিন ও ৬ বছরের মেয়ে সুমাইয়া। আর পিতা আনোয়ার আলী মারা গেছেন ৩ বছর আগে। অভাবের সংসারে তিনি প্রাইমারির গন্ডি পার হতে পারেননি। প্রায় দেড় যুগের বেশি সময় ধরে তিনি শিশুদের পোশাক বিক্রি করেছেন। কিন্তু মহামারি করোনার কারণে তা পাল্টে ফেলতে বাধ্য হয়েছেন। শামীম আহমেদ মনা আরও জানান, করোনাকালীন সময়ে জীবনের তাগিদে অনেকটা বাধ্য হয়ে ব্যবসা পরিবর্তন করেছেন। করোনার শুরুতে লকডাউনে পোশাকের ব্যবসা বন্ধ থাকায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিপাকে পড়েছিলাম। কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। হঠাৎ বুদ্ধিতে করোনার দিনে ‘অত্যাবশ্যক’ হয়ে ওঠা সেই মাস্ক বিক্রি শুরু করি। বর্তমানে মাস্কের ব্যবসায় প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়ায় আগের মতো মুনাফা পাচ্ছেন না। মহামারির সময় কোনোমতে পরিবার নিয়ে দু’বেলা-দু’মুঠো খেয়ে বেঁচে আছেন তারা। প্রথমদিকে ২০ কার্টুন পর্যন্ত মাস্ক তিনি ফেরি করে বিক্রি করেছেন। এখন ১০ কার্টুনের কম বিক্রি হয়। তবে তার নিজের তৈরি কাপড়ের মাস্কের চাহিদা সব সময়। কাপড়ের মাস্কের দাম প্রতি পিস ১০ টাকা।
কথা প্রসঙ্গে শামীম আহমেদ মনা জানান, সারা দিন তিনি যশোর শহরের দড়াটানা, কাপুড়িয়া পট্টি, বড় বাজার, রেজিস্ট্রি অফিস, বিআরটিএ অফিস, আদালত চত্বরসহ বিভিন্ন স্পটে তিনি মাস্ক বিক্রি করেন। বাড়ি ফিরে রাত ৯ টার পর থেকে বসেন নিজের মেশিনে। গভীর রাত পর্যন্ত তিনি কাপড়ের মাস্ক তৈরি করেন। একটানা মেশিনে কাজ করতে খুব কষ্ট হয়। তাই ৩০ টির বেশি মাস্ক তৈরি করা সম্ভর হয় না। তবে এই কাজে পাশে থেকে সহযোগিতা করেন তার স্ত্রী ইয়াসমিন। মাস্ক বিক্রির উদ্দেশ্যে তিনি শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে বের হন। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার নকশায় তৈরি করেছেন পিপিই। তাছাড়া আরও কয়েকটি পিপিই রয়েছে তার। তিনি ব্যক্তিগত সুরক্ষা নিশ্চিতের জন্য পিপিই ব্যবহার করেন। তার সাজ দেখে অনেক ক্রেতা আগ্রহ করে মাস্ক কেনেন। তাতে কোনোমতে জীবন চলে যাচ্ছে এই আর কি।